মুমিনুলের পর এবার স্বপ্ন সাকিব-সৌম্যে
ভিড় ঠেলে একে একে দর্শকরা স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন। ফিরছিলেন আশা জাগানিয়া স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিস্ময় ২৩ বছরের মুমিনুল হক।
দিনের খেলা শেষ হতে তখন বাকি শেষ ২ বল। মমিনুলের ব্যাটে ৮০ রান। তাকে ঘিরেই স্বপ্নময় এক আবহ সৃষ্টি হয়েছিল। সেঞ্চুরির স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছেন জুলফিকার বাবর। তার একটি নিখুঁত নিশানার বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েছেন টেস্ট ক্রিকেটের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা মুমিনুল। যেখানে রিভিউ নিয়েও রাজা বাঁচাতে পারেননি তিনি। হতাশ করে মুমিনুল ফিরে গেলেও এখন স্বপ্ন দেখছেন ভক্তরা সাকিব-সৌম্যের ব্যাটে।
২৭তম ওভারে খুলনা শেখ আবু নাসের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন মুমিনুল। সাবলীল-নির্বিঘ্নে থাকা সেই মুমিনুল ৮৯.৫ ওভারে গিয়ে আটকে গেছেন। তাতেই স্বপ্নভঙের বেদনায় পুড়ছে খুলনাবাসী। মঙ্গলবার শুরু হওয়া টেস্টে প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে ২৩৬/৪।
পুরোপুরি সেট হওয়া মুমিনুলের উইকেট পড়ে না গেলে বাংলাদেশ প্রথম দিন শেষে এগিয়েই থাকত। আর তাকে ঘিরেই স্টেডিয়াম উপচে পড়া দর্শকদের স্বপ্নের ডাল-পালা বড় হচ্ছিল। তারপরও বাংলাদেশ-পাকিস্তানের প্রথম দিন সমান সমানই। রান মাত্র ২৩৬। নেই ৪ উইকেট। প্রথম দিনের ওভারও প্রায় শেষ। এই রান; আর যাই হোক বাংলাদেশকে কিন্তু খুব এগিয়ে রাখছে না। শেষ বলে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করা মুমিনুল আউট না হতেন; তা হলে এগিয়ে থাকত বাংলাদেশ।
টস বিষয়ক গল্প অনুযায়ী জিতলেই ব্যাটিং, মুশফিক করেছেন তাই। তবে বাংলাদেশের বড্ড সতর্কভাবে ব্যাটিংয়ের শুরুটা একটু বেমানান মনে হচ্ছিল। তবে বাংলাদেশের তামিম-ইমরুলের কথা বাদ দিই। কারণ, তারা ওপেনার। স্বাভাবিকভাবেই উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা। সেখানে ওভারে চোখ রাখা হয়নি। রানের ঢিমেতাল থাকলেও পাকিস্তানের বলে ভেঙে পড়েননি। করেছেন সাহসী প্রতিরোধ। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম-ইমরুল দেখে শুনে ব্যাটিং করে যখন হাফসেঞ্চুরি করেছেন তখন কিন্তু পাকিস্তান বিপদ দেখছিল।
প্রথম পানি পানের বিরতি পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাটিং একেবারে গুটিয়ে শুটিয়ে। ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের পাশে তখন মাত্র ২৩ রান। তবে তুলনামূলক কম ওভারেই পরের ২৭ রান তুলেছেন তামিম-ইমরুল। বাংলাদেশ ২৬.২ ওভারে ৫০ রান করার পর ওই ওভারের শেষ বলে তামিম আউট হয়েছেন ইয়াসিরের বলে। তারা যুগলবন্দিতে ওভারপ্রতি ১.৯২ রান তুলে শুরু করেছিলেন। সেখান থেকেই ইমরুল কায়েস হাফসেঞ্চুরি করেছেন সঙ্গী হিসেবে মুমিনুলকে পেয়ে। মুমিনুলেই যেন বাংলাদেশ আবারো অনুপ্রেরণা দেখেছে। তখন রানের গতিও ক্রমে সচল হয়েছে। এ জুটি মাত্র ১৩.২ ওভারে গড়ে ৩ করে ৪০ রান তুলে নিয়েছে। হাফ সেঞ্চুরিও দেখেছেন ইমরুল। কিন্তু তাকে রিটার্ন ক্যাচ নিয়ে মোহাম্মদ হাফিজ ফিরিয়ে দিয়েছেন। এটা তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। ১২৯ বলে ধৈর্যশীল থেকে ইমরুল হাফসেঞ্চুরির (৫১) পরপরই ফিরে গেছেন। ৯২ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন। আবারো পার্টনারশিপ। এবার মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ। তাদের ব্যাটে আসে ৯৫ রান। এটাই প্রথম দিনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ যুগল। ওয়ানডে ও টোয়েন্টি২০ ম্যাচে নিজ রূপে ফিরতে না পারলেও টেস্টে ৪৯ রান করে রানে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। সাবলীলভাবেই এগুচ্ছিলেন মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু হাফসেঞ্চুরির মুখে থাকা মাহমুদউল্লাহ একটু ছটফট করতে গিয়ে আউট হয়েছেন। তার উইকেটে ভাগ বসিয়েছেন ওয়াহাব রিয়াজ। ততক্ষণে ৭৪ ওভারের খেলা শেষ, রান ১৮৭।
বাংলাদেশের জন্য প্রথম দিন আরও দারুণ হতে পারত যদি না শেষ ওভারে সেট ব্যাটসম্যান মুমিনুল ফিরে না যেতেন। স্পিনার জুলফিকার বাবরের দারুণ নিশানার বলে বোকা বনেছেন মুমিনুল। অথচ তখন তার ব্যাটে আরেকটি সেঞ্চুরির স্বপ্ন জেগেছিল। পাকিস্তানের দীর্ঘকায় বাবরের বলটি মিডল স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলার মতো বল ছিল। রিভিউতে তাই মনে হয়েছে। মুমিনুলের ৮০ রানের ইনিংসটি তাকে আবারো নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মুমিনুলে স্বপ্ন দেখা ভক্তরা সাকিবকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনছেন। এই মাঠেই সাকিব সেঞ্চুরি আর ১০ উইকেট তুলে নিয়েছেন ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তেমন কিছুর অপেক্ষায় থাকছেন তারা। সাকিবের ব্যাটে ১৯, ৫৩ বলে।
মুমিনুল-সাকিব ১৫.৫ ওভার ব্যাটিং করে ৪৯ রান তুলেছেন। মাত্র ১৩ টেস্ট খেলা মুমিনুল টানা ১০ টেস্টে হাফসেঞ্চুরি প্লাস রান করে ছুঁয়ে ফেলেছেন ক্রিকেট কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকার এবং জন অ্যাডরিচের রেকর্ডকে। এটা মুমিনুলের অষ্টম হাফসেঞ্চুরি। হাফসেঞ্চুরির পথে খেলেছেন ১০৮ বল।
জুলফিকার বাবরের বল ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে দিয়েই হাফসেঞ্চুরি করেছেন।
৫২, ৪০, ৯৫ এবং ৪৯ রানের যুগলের পরও কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজি বড় ভিতের উপর নেই। যদিও এ্ই মাঠে ৩০০ প্লাস রানকেই মুমিনুল যথেষ্ট মনে করছেন। কারণ, আগের দিন কিন্তু মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের ৬০০ রান কারার ক্ষমতা আছে- এমন কথাও বলেছেন।
টেস্ট ম্যাচের টিকিটও এখন বাংলাদেশের তৃতীয় বড় শহর খুলনায় সোনার হরিণ। উৎসবমুখী ভক্তরা শহর জুড়েই টিকিটের জন্য ছুটছেন। কেন, তা সকাল সাড়ে ৯টা না বাজতেই বুঝা গেছে। ম্যাচ শুরুর আধাঘণ্টা আগেই আবু নাসের স্টেডিয়ামের আশ-পাশে বিপুল দর্শকদের উপস্থিতি। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো সব বয়সের মানুষই। সবার লক্ষ্য টেস্ট ম্যাচে শরিক হওয়া। এর আগেও এই স্টেডিয়ামে আরও ২টি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১২ এবং ২০১৪ সালে, তখনো ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বুধবার আসবেন তারা নতুন স্বপ্ন নিয়ে। সাকিব-মুশফিক-সৌম্য-শুভাগতদের ব্যাটিং দেখতে। সেখানেও হয়তো খুলনার পয়মন্ত মাঠ বাংলাদেশের জন্য কিছু তুলে রেখেছে।
স্কোর :
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, ২৩৬/৪, ওভার ৮৯.৫ (মুমিনুল ৮০, ইমরুল ৫১, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, সাকিব ১৯*; হাফিজ ১/৩৮, ওয়াহাব ১/৪০)
*প্রথম দিনশেষে