৩ সিটি নির্বাচন বর্জন বিএনপির

102266-(1)-1অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা সিটি (উত্তর-দক্ষিণ) করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
এর এক ঘণ্টা আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনও বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
মওদুদ বলেন, ‘মানুষ যে প্রত্যাশা করেছিল সে প্রত্যাশা থেকে তাদের বঞ্চিত করেছে এ অবৈধ সরকার ও আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কোনো কেন্দ্রে আমাদের এজেন্ট নেই। সব কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাবের ছত্রছায়ায় ভোট ডাকাতি হয়েছে। এ নির্বাচন আমরা মানি না। এ নির্বাচন আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম।’
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আদর্শ ঢাকা আন্দোলন মনোনীত ও বিএনপি সমর্থিত দক্ষিণ সিটির প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস এবং উত্তর সিটির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। আশা করেছিলাম, আমরা যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিজয়ের মাধ্যমে তা আরও জোরদার হবে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অনেক জায়গায় আমাদের এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। অনেক এজেন্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাজার হাজার পুলিশ, র‌্যাব বিজিবি নিয়োগ করা হয়েছে নির্বাচনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। তারা মূলত সরকারের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছে। অনেক জায়গায় সকাল ৯টার মধ্যেই ভোট শেষ করে ফেলেছে। নগ্নভাবে ভোটারদের বের করে দিয়েছে। নিজেরা সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে ফেলেছেন। হয়তো ভোট শেষে এ কমিশন ঘোষণা দেবে এতো শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে পাঁচ শতাংশ মানুষও নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তার গাড়িতে চড়-থাপ্পড় মারা হযেছে। র‌্যাব-পুলিশের ছত্রছায়ায় রীতিমতো ভোট ডাকাতি ঘটেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মানুষ এ প্রহসনের নির্বাচন মানে না।’
মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস এ সময় বলেন, ‘আমি সকাল সাড়ে ৭টায় বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন এবং নিজের ভোট দেওয়ার জন্য তৈরি ছিলাম। এ সময় খবর পেলাম বিভিন্ন কেন্দ্র দখল করা হযেছে। আমি প্রথমে ছুটে গেলাম ফকিরাপুলের কোমর গলি কেন্দ্রে। সেখানে আমার এজেন্টদের মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাকেও অপমান ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। অনেক গণমাধ্যমকর্মীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রতিটি গলি আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দখল করে নিয়েছে। সকালেই দখল ও ভোট শেষ করা হয়েছে।’
তিনি গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা আপনাদের কাছে পক্ষপাত চাই না। নিরপেক্ষতা চাই। দেশবাসী দেখুক কিভাবে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্র দখল করেছে।’
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আজ যা ঘটেছে সেটা নির্বাচন বললে অসত্য বলা হবে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম এগিয়ে যেতে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে বাস-মাইক্রোবাস ভর্তি করে লোক আনা হয়েছে। তাদের চিরকুট দেওয়া হয়েছে। সে চিরকুট দেখে দেখে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। তারা সরকারের সমর্থক প্রার্থীদের পক্ষে সিল মেরেছে।’
তাবিথ বলেন, ‘আমাকে অনেক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তেজগাঁও কেন্দ্রে আমার এজেন্টকে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাকেও ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’
তাবিথ বলেন, ‘মিরপুর ৬নং কেন্দ্রে প্রচুর পুলিশ অফিসার রাখা হয়েছে। তাদের কারো পোশাকে নাম ও ব্যাচ লাগান ছিল না।’ নির্বাচনের নামে এ তামাশা করার কী উদ্দেশ্য ছিল সরকারের, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend