জালভোট কেন্দ্র দখলের ঘটনায় নিষ্ক্রিয় ইসি
ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক জালভোট, কেন্দ্র দখল, সহিংসতা ও নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও কেন্দ্র দখলের প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্য আফিল-মনিরুলের গেজেটে প্রকাশ আটকে দেয় ইসি। এছাড়া চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও প্রকাশিত ছবি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের কাছে তা পাঠিয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে চেয়েছিল কমিশন। যদিও শেষ-মেশ দোষীদের বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কেন্দ্র দখল, জালভোট, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টেদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এমন অভিযোগ তুলে তিন সিটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। নির্বাচনের পরের দিন বৃহস্পতিবার অনিয়মের নানা চিত্র দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এসব ছবিতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরও জালভোট দিতে দেখা গেছে। কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনে আওতায় আনার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এদিকে জালভোট, কেন্দ্র দখল ও কারচুপির স্বচিত্র ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হলেও দোষীদের শাস্তির বিষয়ে এখনও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মুখ খোলেননি। ইসির আইন শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, সিইসি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে তা তদন্ত করতে বা খতিয়ে দেখার বিষয়ে এখনও কিছু বলেননি। জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন তো মাত্র শেষ হলো। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, সেটা আমরা দেখবো। দায়ী হলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ দোষীদের বিরুদ্ধে কমিশন কি ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইনে কি আছে সেগুলো দেখতে হবে। আন্দাজে তো বলা যাবে না।’ ‘কত দিনের মধ্যে কমিশন ব্যবস্থা নেবে’ জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে পারবো এটা বলা যাবে না। এভাবে দিনক্ষণ বলা সম্ভব নয়।’ তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশন চাইলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ আমলে নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে পারেন। তবে এটা কমিশনের সচ্ছিদার বিষয়। তারা মনে করেন, এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হলে গেজেট প্রকাশের আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। গেজেট প্রকাশ হয়ে গেলে এ বিষয়ে কমিশনের কিছুই করার থাকবে না। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘গণমাধ্যমের ছবি দেখেও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারে। আবার ছবি না দেখেও ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে ইসি প্রকাশিত সংবাদগুলো তদন্ত করতে পারে। এমনি এসব সংবাদ আমলে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত নির্বাচন বাতিল করতে পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এটা করবে কিনা, তা তাদের স্বদিচ্ছার ব্যাপার।’ তিনি বলেন, ‘ইসিকে যা করার গেজেট প্রকাশের আগেই করতে হবে। গেজেট প্রকাশ হয়ে গেলে ইসির আর কিছু করণীয় থাকবে না।’ সাবেক এ কমিশনার আরও বলেন, ‘এখন সব কিছুই নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর। তারা চাইলে খতিয়ে দেখতে পারে এবং যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে পারে।’ সরকারি চাকরিজীবী কোনো কর্মকর্তা অনিয়ম বা জালভোটে জড়িত থাকলে ইসি তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করতে পারেন বলেও জানান তিনি। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন চাইলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, সে ক্ষমতা তাদের আছে। কিন্তু ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা সেটা অনুধাবন করতে পারে না।’ ‘নিরপেক্ষতার সমস্যার কারণেই তারা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে দূরে থাকে’ বলেও মন্তব্য তার। নির্বাচনী আরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনে জালভোট বা অন্য কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে দুই থেকে সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে। এছাড়া এক লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এদিকে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জালভোট, নির্বাচনী ফলাফলে ত্রুটি, জালিয়াতিসহ নানান অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কশিমনে অভিযোগ দিয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এতে তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জানাতে পারেন। তারা ট্রাইব্যুনালে বিচার পাবেন। এখন নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করার সুযোগ নেই।