বান কি মুনকে প্রধানমন্ত্রী > বিএনপিকে নাশকতা ছাড়তে বলুন
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপিকে নাশকতার পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার পরামর্শ দিন।’
জাতিসংঘ মহাসচিব শুক্রবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার কাছে এ আহ্বান জানান।
বিএনপিকে সন্ত্রাসের পথ থেকে ফেরাতে বান কি মুনের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে তারানকোকে বলেছি। গণতান্ত্রিক পথ সুগম করতে প্রয়োজনে আলোচনা করবেন তিনি।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, ‘শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে ফোন কলটি আসে। এ সময় প্রায় ১৪ মিনিট কথা হয় জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।’
সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব এমন কথা উল্লেখ করলে তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রাণহানি ছাড়া এই প্রথম কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচনে জিতবে না বলে তা প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি ভোট বর্জন করেছে।’
শামীম চৌধুরী ফোনালাপ প্রসঙ্গে আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন, ‘তিন ঘণ্টা পর বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেও যে ভোট দলটির সমর্থিত প্রার্থীরা পেয়েছেন তাতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।’
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে গত তিন মাসের সহিংসতার কথা তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের আন্দোলনের ডাকে জনগণ আসেনি, নেতাকর্মীরাও আন্দোলনে থাকেনি। একইভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েও নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে পারেনি তার দল। নেতাকর্মীদের পোলিং এজেন্ট বানিয়ে নির্বাচন কেন্দ্রেও পাঠাতে পারেনি তারা। কারণ তারা জনগণকে হত্যা করে আন্দোলন করেছে। তার সরকার জনগণকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।’
শামীম চৌধুরী জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে আরও বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচনে আসা স্বস্তিকর ছিল কিন্তু মাঝপথে সরে যাওয়া দুঃখজনক।’ এ জন্য উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করার জন্য জন্য বান কি মুনকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের গণতন্ত্র অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বান কি মুনের আন্তরিকতার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিন সিটিতেই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে বলেও জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দৃঢ় ভূমিকা পালন করেছে।’
‘নির্বাচনে ৪৪ শতাংশ ভোট পড়েছে’ জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রধানমন্ত্রীর বলেন, ‘ভোটারের সংখ্যা অস্বাভাবিক ছিল না। যে কারণে ভোট নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলোর অবকাশ নেই।’
‘নির্বাচন কমিশনের কাছে ৫ শতাংশ অনিয়মের অভিযোগ এসেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ ৫ শতাংশ ভোট বাতিল করেই ফল ঘোষণা দেয় কমিশন।’
‘বিএনপি অসৎ উদ্দেশ্যে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ায়’ উল্লেখ করে বান কি মুনকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপি যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, জনজীবন ও জনসম্পদ নষ্ট করেছে, জনগণ কখনও তা চায়নি। তারা তা মেনেও নিতে পারেনি। এ কারণে মানুষ বিএনপিকে ভোট দেয়নি। আর এটা বুঝতে পেরেই নির্বাচন শুরুর তিন ঘণ্টার পরই বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়।’
ভোটবিহীন নির্বাচনের অভিযোগ এনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। ২৮ এপ্রিল ভোট গ্রহণ শরুর চার ঘণ্টার মাথায় এসে তারা তা বর্জন করেন।