মাদকে সয়লাব শ্রীবরদী <<< এক সপ্তাহে গ্রেফতার ৪, মাদক উদ্ধার
মোঃ মিজবাহ উদ্দিনঃ মাদকে ছেয়ে গেছে শ্রীবরদী। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে মরণ নেশা। সহজলভ্য হওয়ায় তা ছড়িয়ে পড়ছে কিশোর, ছাত্র, যুব, শ্রমিক সহ সব শ্রেনী পেশার মানুষের মধ্যে। এ থেকে মহিলারাও বাদ নেই। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা। আইন শৃংখলা বাহিনী গত এক সপ্তাহে অভিযান চালিয়ে ১৫০ বোতল ফেন্সিডিল, ২ বোতল ভারতীয় মদ ও ১৬ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট সহ ৪ জনকে আটক করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১মে শ্রীবরদী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে পৌর এলাকায় পৃথক অভিযানে কলাকান্দা গ্রামের বেলাল মিয়ার ছেলে সবুজ (২২), চাঁন মোহনের ছেলে গৌরাঙ্গ মোহন (২০) ও উত্তর শ্রীবরদী মহল্লার চাঁন মিয়ার ছেলে শাহিন ওরফে শাকিল (২২) কে ১৬ পিছ ইয়াবা ও ২ বোতল ভারতীয় মদ সহ আটক করে। এর আগে ২৮ এপ্রিল শেরপুর ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী মাদকের নিরাপদ জোন হিসাবে পরিচিত সিংগাবরুনা ইউনিয়নের জুলগাও থেকে ১৫০ বোতল ফেন্সিডিল সহ শহিজল কে আটক করে।
৪মার্চ শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হাবিবা শারমিন উপজেলার তাতিহাটি ইউনিয়নের চককাউরিয়া গ্রাম হতে ৫শ গ্রাম হেরোইন সহ লালজি রবিদাসের ছেলে লাল চাঁন রবিদাস কে আটক ও ভ্রাম্যমান আদালতে ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
এলাকাবাসী জানায়, শ্রীবরদী এখন মাদকের আখরায় পরিনত হয়েছে। হাত বাড়ালেই মেলে হেরোইন, ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেন্সিডিল, ভারতীয় মদ সহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। এতে ধ্বংস হচ্ছে সব বয়সী ও শ্রেনী পেশার মানুষ। সমাজে মাদক ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ায় সামর্থবান অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনত্র পাড়ি জমাচ্ছে। স্কুল কলেজের ছাত্র থেকে শুরু করে প্রায় সব পেশার মানুষ মাদকের জালে আটকা পড়ছে। বাদ যাচ্ছে মহিলারাও।
সরজমিনে উপজেলার হেরোইনের হাট নামে পরিচিত খামারিয়া পাড়া, ফতেহপুর, উত্তর শ্রীবরদী, উত্তর বাজার ও সাতানী শ্রীবরদী‘র সচেতন মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সকল এলাকার অনেক ভদ্র ঘরের ছেলেদেরও কেউ না কেউ মরণ নেশা হেরোইনে আসক্ত। তারা জানায়, অনেকে প্রচুর টাকা খরচ করে তাদের হেরোইনে আসক্ত ছেলেদের চিকিৎসা করে ভাল করে আনলেও কয়েকদিন পর আবারও সে পূর্বের মতোই আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। কারণ হিসাবে তারা জানায়, এ এলাকার প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই কেউ না কেউ হেরোইনে আসক্ত। ভাল হয়ে আসার পর সে আবারও পুরোনো বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নতুন ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। অনেক অভিবাবক নিয়মিত মাদকাসক্ত ছেলের মাদকের টাকার জোগান দিতে না পারায় নিয়মিত ছেলের হাতে লাঞ্চিত হচ্ছে। তারা আরও জানায়, মাদক সেবীর সংখ্যা বেশী হলেও মূল মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা হাতেগুনা। পুলিশী অভিযানে মূলত মাদকসেবীরাই ধরা পরে। তাই মাদক ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। মাদক ব্যবসায়ীদের আবার তার পরিবারের পক্ষ থেকেও সমর্থন দেয়া হয়। মাঝে মধ্যে ব্যবসায়ীদের দু‘একজন আটক হলেও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তদবির করে দ্রুত বের করে নিয়ে আসাই তার প্রমাণ বলে জানান খামারিয়াপাড়া গ্রামবাসী।
মাদকসেবীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানায়, অধিকাংশ মাদক আসে বকসীগঞ্জ হয়ে। আর শ্রীবরদী হচ্ছে মাদক আনা নেয়ার নিরাপদ রুড। অনেক ব্যবসায়ী শ্রীবরদী পার করে দেয়ার কমিশনেও এ ব্যবসা করে। তারা আরও জানায়, যারা লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করছে পুলিশ তাদের ধরতে পারে না। আর ধরলেও মাদকসেবীর মামলায় তারা ২/৩ দিনেই বের হয়ে আছে। মাদক বিক্রিও কৌশল হিসাবে তারা জানায়, খামারিয়াপাড়ায় হেরোইন বিক্রি করে মহিলা দিয়ে। খামারিয়াপাড়া গ্রামের জামে মসজিদের মুসল্লী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ গ্রামের দুই তিন জন ব্যবসায়ীর কারণে পুরো এলাকা নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে কয়েক শুক্রবার জুমআ পর মসজিদে আলোচনাও হয়েছে এবং একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু মাদক প্রতিরোধ করতে গিয়ে একই মসজিদের সাবেক ইমাম এলাকার বয়োজৈষ্ঠ্য ক্বারী মোঃ জালাল উদ্দিন মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার পর সে উদ্যোগ থেমে গেছে।
এছাড়াও শ্রীবরদীর ভায়াডাঙ্গা, কর্ণঝোড়া, ঝগড়ার চর মাদকের নিরাপদ আস্তানা হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আতংকিত অভিভাবকরা বলেন, পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে দুই এক দিনের মধ্যেই তাঁরা বের হয়ে আছে। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাদক ব্যবসায়ীদের সাজার দাবী জানিয়েছেন তারা।