ছিটমহলের ৫১ হাজার বাসিন্দা পছন্দমতো নাগরিকত্ব পাবেন
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহলের প্রায় ৫১ হাজার বাসিন্দা নিজেদের পছন্দেই নাগরিকত্ব পাবেন। ছিটমহল বিনিময়ের পরে সেখানকার কেউ চাইলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে পারবেন। আবার কেউ ভারতে বসবাস করতে চাইলে সেদেশের নাগরিকত্ব পাবেন। ভারতের লোকসভায় স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের পর এখন দুই দেশের ছিটমহলবাসীর মধ্যে এ বিষয়ে নতুন করে সমীক্ষা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানায়।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির (বিবিইইসিসি) এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহলের প্রায় ৫১ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ৭৪৩ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব না নিয়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব চেয়েছেন। বাকিরা ছিটমহলগুলো যে দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে সে দেশেরই নাগরিক হতে চান। তারা কেউই যুগ যুগ ধরে অবস্থান করে আসা বসতি ছাড়তে চান না।
বাংলাদেশ ও ভারত; দুই দেশেরই ছিটমহলগুলো মুসলমান অধ্যুষিত। ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহলগুলো স্থলসীমান্ত চুক্তি ও এর প্রটোকল বাস্তবায়নের ফলে ভারতের অংশে পরিণত হলে ওই ছিটমহলের বাসিন্দার সবাই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ছিটমহল যেগুলো চুক্তি ও প্রটোকল বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের অংশে পরিণত হবে তার ৩৭ হাজার ৩৩৪ জনের মধ্যে ৭৪৩ জন ভারতে ফিরে যেতে ও ভারতের নাগরিক হতে চান। বাকি সবাই বাংলাদেশিই হতে রাজি।
২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে দুদেশের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহলে এক সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছিল। এতে ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে ১৪ হাজার ২১১ লোক গণনা করা হয়। অপরদিকে বাংলাদেশে ভারতের ১১১টি ছিটমহলে ৩৭ হাজার ৩৬৯ লোক গণনা করা হয়; যাদের ৪৯টি পরিবারের ৭৪৩ জন ভারতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহলের কোন পরিবার বাংলাদেশে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তবে সমীক্ষার পর কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে। অনেকেই এর মধ্যে মারা গেছে। আবার জন্ম হয়েছে অনেক শিশুর। তাই নতুন করে সমীক্ষার প্রয়োজন। এছাড়া ওই সময় সমীক্ষায় আয়তন ও লোকসংখ্যা ছাড়া অন্য বিষয়ে নজর দেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভারতের লোকসভায় স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পাসের পরে এখন ছিটমহলে নতুন করে সমীক্ষা করা হবে। এই সমীক্ষায় ছিটমহলের আয়তন আর লোকসংখ্যা গণনার পাশাপাশি ছিটমহলবাসী কে কোন্ দেশে বসবাস করতে আগ্রহী সেটা আবার যাচাই করা হবে। সমীক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের বিষয়ে আলাদা তথ্য, পেশা, নাগরিকত্বে আগ্রহ ইত্যাদিসহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ছিটমহলবাসীর আগ্রহকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। আর ১৬২টি ছিটমহলে সমীক্ষার পরেই বোঝা যাবে ছিটমহল বিনিময় হওয়ার পরে ঠিক কতজন নাগরিকত্ব পরিবর্তন করতে চান।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী এখন ছিটমহলের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন সম্ভব নয়। কেননণ্ড ওই সমীক্ষার পরে অনেকেই এখন নিজেদের মত পরিবর্তন করেছেন। তাই নতুন করে সমীক্ষার প্রয়োজন। নতুন সমীক্ষার পরেই বোঝা যাবে কোন্ দেশের ছিটমহলের কত মানুষ অন্য দেশে স্থানান্তরিত হতে চান। তার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হবে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিটমহলের যে অংশ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হবে সেই অঞ্চলের মানুষের পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক প্যাকেজের দাবি করেছেন। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতে আনুমানিক ৩৫ হাজার মানুষ পশ্চিমবঙ্গে যাবেন। সে কারণে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন প্যাকেজ দাবি করেন। মমতার দাবি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার তিন হাজার ৮ কোটি টাকা মঞ্জুরও করেছে।
সীমান্ত বিল পাসের সময় ভারতের রাজ্যসভায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানান, স্থলসীমান্ত চুক্তি নির্ধারিত হলে বাংলাদেশের বহু মানুষ সেদেশের নাগরিক হবেন। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদের পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক প্যাকেজ চেয়েছিলেন। সেই মতো পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তিন হাজার ৮ কোটি টাকা দেয়া হবে। এর মধ্যে অবকাঠামো তৈরিতে খরচ হবে ৭৭৫ কোটি। বাকি দুই হাজার ২৩৪ কোটি টাকা ছিটমহলের অধিবাসী যারা ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে ভারতে আসতে চাইবেন, তাদের পুনর্বাসনে খরচ হবে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত স্থলসীমান্ত বিল ভারতের লোকসভায় পাস হয়। এর আগে বিলটি ভারতের রাজ্যসভা ও মন্ত্রিসভায় পাস করানো হয়। এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সীমান্তের প্রায় ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যার সমাধান হলো।
সৌজন্যে: জনকণ্ঠ