গাছে বেঁধে নির্যাতন: হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন ববিতা
১০ দিন ধরে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সেনা সদস্য স্বামীর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার ববিতা খানম।
নড়াইল সদর হাসপাতাল থেকে রবিবার বিকেলে তিনি লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের এড়েন্দা গ্রামে বাবার বাড়ি ফিরে যান। তবে বাড়ি পৌঁছানোর পর পরই বমি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ববিতা।
নড়াইল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. আসাদুজ্জামান মুন্সী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ববিতা সুস্থ হওয়ায় তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ সেবনের জন্য তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে অসুস্থ অনুভব করলে তাকে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’
এদিকে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালবরাত গ্রামে গৃহবধূ ববিতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারপিটের ঘটনায় রবিবার স্বামীসহ আসামিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী মনজিল মোরশেদের এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এ ছাড়া দোষীদের গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা— সে বিষয়ে আগামী ১৮ মে নড়াইল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ববিতার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের শালবরাত গ্রামের ছালাম শেখের ছেলে শফিকুল শেখের সঙ্গে পাশের এড়েন্দা গ্রামের ববিতার (২১) সঙ্গে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক গোপনে বিয়ে হয়। ববিতা ইসমাইল মোল্যার মেয়ে। তিনি নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতক (প্রাইভেট) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। মোবাইলে প্রেমের সম্পর্কের পর তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
এক পর্যায়ে স্বামী সেনা সদস্য শফিকুল তার পরিবারের সদস্যদের অমতের কারণে স্ত্রী ববিতার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর ববিতা আদালতের শরণাপন্ন হন এবং একটি মামলা করেন। ওই মামলার তুলে নেওয়ার জন্য ৩০ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে ববিতার শাশুড়িসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন ববিতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাচন চালায়।
বিষয়টি নিয়ে ওইদিনই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর ও ছবি প্রকাশিত হয়। এতে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনার পাঁচ দিন পর ববিতার মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে লোহাগড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।