সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমল
৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো হয়েছে। এটি এখন ১১ পয়েন্ট ২৬ করা হয়েছে। আমি বেশ কিছুদিন ছিলাম না, তাই দেরি হয়েছে। আমি ইন্সট্রাকশন দিয়েছি। আজকে থেকে এটা কার্যকর হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রবিবার বিকেলে সংসদীয় কমিটির সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সঞ্চয়পত্র থেকে যেটা আপনারা পান সেটা আমি গত বছর বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। বেশ বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কারণ তখন সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছিল না। গত বছর ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের জন্য সুদের হার করেছিলাম ১৩ পয়েন্ট ১৯। এটাকে কমানো হয়েছে। ১১ পয়েন্ট ২৬ করা হয়েছে এবং এটা এ্যাফেক্টিভ হয়েছে। এটা আমরা করেছি এ কারণে যে উই সুড নট বি দ্য পার্টি যে সবচেয়ে বেশি সুদ দেয়। আমাদের চেয়ে বেশি সুদ ব্যাংকরা দেয়। আমরা সে অবস্থায় থাকতে চাই। তাহলে আমরা জোর করতে পারি তোমরা এটা কমাও।
মন্ত্রী বলেন, সুদ কমানোর ক্ষমতা আমার নেই। সুদ নির্ধারণ আমি করি না। সুদ নির্ধারণ করে যারা ব্যাংকের কর্মকর্তা আছেন, যারা ব্যবসায়ী আছেন তারা। মজার বিষয় হল যে, ভদ্রলোক ব্যবসায়ী হিসেবে উচ্চ সুদের জন্য অভিযোগ করছেন, তিনি ব্যাংকের বোর্ডে যখন বসেন তখন সুদের হারটা অত্যন্ত বাড়িয়ে দেন।
বাজেট বাস্তবায়নে শেষ সময় তাড়াহুড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেষ সময়ে তাড়াহুড়া হয়, এটা হবেই। আমি বিভিন্ন মহলে ৬০ বছর কাজ করছি। প্রত্যেকখানে বাজেট বানানোর সময় তাড়াহুড়া হয়। এটা অবধারিত, এটা হবেই। কারণ এটাই মানুষের চরিত্র। এতে কিছু অপচয় হয়। কিন্তু আমার বিবেচনায় সার্বিক বাজেট ইমপ্লিমেন্টে অসুবিধা হয় না, ভালোই হয়।
উপজেলায় আয়কর আদায় প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা গত ৬ বছরে আমাদের যে বোর্ড অব ডিরেক্টর আছে তা বড় ধরনের সংস্কার করেছি। সব উপজেলায় এখনো আমরা অফিস করতে পারিনি। তবে উপজেলায় আমরা অফিস করা বাড়িয়েছি এবং আরও বাড়বে। উপজেলায় অফিস করলে পরে, উপজেলায় যারা কর দেওয়ার মতো আছে তাদের ধরা যায়। শুধু মাত্র আয়করে না, অন্যান্য করের ব্যাপারে প্রযোজ্য আছে।
তিনি বলেন, আমাদের গত ৫ বছরে প্রাধান্য ছিল জ্বালানি খাত। এখন সেটা শিফট করছি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন খাতে। যদিও এলোকেশন (বণ্টন) এখনো পাওয়ার সেক্টরে (বিদ্যুৎ-জ্বালানী) কিন্তু বেশি পাবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এমপিও থাকছে না। এমপিও রিনিউ হচ্ছে। এমপিওতে যেটা হয় একটা স্কুলের শিক্ষক তার বেতনটা পান। এটা পরিবর্তন হচ্ছে। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেক কাজ করছে। এলাকা বিশ্লেষণ করে, কোন জায়গায় স্কুল হওয়া উচিত- সেটার প্রাপ্যতা ইতোমধ্যে স্টাবলিশ। সেই প্রাপ্র্যতার উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হবে কোন বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা যাবে এবং কোন বিদ্যালয়কে সাহায্য দেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এমপিও সাহায্যের অসুবিধা হলো এতে সুবিধা শুধু টিচাররা পান। অন্য কেউ এটার সুযোগ পায় না। এ জন্য এটার কাইটেরিয়া হচ্ছে স্কুলের অবকাঠামোতে কিছু দিতে হবে। বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন সেখানেও দিতে হবে। এমপিও যেটা দেওয়া হয়েছে সেটা থেকে কমবে না। কাইটেরিয়া বাড়বে।
তিনি বলেন, তাঁতীদের জন্য প্রোগ্রাম নিতে পারিনি। আগে যেমন কতগুলো তাঁত বস্তি ছিলো। তাঁতীদের এলাকা এখন নেই। এটা আইডেন্টিফিকেশনে বেশ সমস্যা হচ্ছে। সে কারণে তাঁতীদের জন্য বিশেষ সুযোগ দেওয়া যায়নি। তবে তাঁতীদের রংসহ যে সব উপকরণ প্রয়োজন হয় সেগুলোর বিষয়ে আমরা যথেষ্ট রিফমর্স করেছি।
মুহিত বলেন, আমাদের দেশে সবজি, ফল, ফসল ব্যাপকভাবে উৎপাদন বেড়েছে। তার প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু তেমন হয়নি। সে ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া এই সরকার প্রথম থেকেই গ্রহণ করেছে।
সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি, সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটি, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, অর্থ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সঙ্গে এ আলোচনা হয়।
আলোচনা আরও উপস্থিত ছিলেন— পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান, সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, ডা. আ ফ ম রুহুল হক, ড. আবদুর রাজ্জাক, শামসুল হক টুকু, সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, ওয়াসিকা আয়শা খান, আবদুর রউফ, মুহিবুর রহমান মানিক, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।