‘জুনেই আসছেন মোদি’
অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের কারণে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিলটি নতুন করে ভারতের রাজ্যসভা ও বিধানসভায় পাস করতে হবে। এই ঘটনায় রবিবার দুপুরের পর থেকে কূটনীতিকসহ বিভিন্ন অঙ্গনের অনেকেই বলছিলেন, বহু কাঙ্ক্ষিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর আবারও পিছিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্য রিপোর্টকে নিশ্চিত করেছে যে, নতুন করে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিল পাসের বিষয়টি নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক দ্য রিপোর্টকে রবিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘না, স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নের বিলটি নতুন করে ভারতের রাজ্যসভা ও বিধানসভায় পাস করানোর ঘটনা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করতে পারেন এই সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই প্রস্তুতি চলছে। তবে দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
জানা গেছে, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতের সংবিধানের সংশোধন প্রয়োজন। এ জন্যই বিলটি দেশটির রাজ্যসভা ও বিধানসভায় পাস করানো হয়। আর এ জন্য ভারতের সংবিধানে ১১৯ বারের মতো সংশোধন করতে হচ্ছে। কিন্তু বিলটি পাস করানোর সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলে নথিপত্রে ১১৯-এর জায়গায় ১০০তম সংবিধানের সংশোধন হিসেবে দেখানো হয়। তাই বিলটি রাজ্যসভা ও বিধানসভায় নতুন করে পাস করাতে হবে।
একাধিক কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, সামনের সোমবার বিলটি রাজ্যসভায় আবার নতুন করে পাস করানো হবে। তারপর আবার বিধানসভায়ও পাস করানো হবে। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার কংগ্রেসের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে কার্যকর প্রস্তুতি নিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করতে পারেন। বাংলাদেশ সফরের আগে কংগ্রেস আমল থেকে ঝুলে থাকা সীমান্ত বিল ও তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ওপর জোর দেন নরেন্দ্র মোদি। ‘খালি হাতে বাংলাদেশে আসবেন না’ এমন মনোভাবও জানিয়ে দেন তিনি। অবশেষে সীমান্ত বিল পাস হবার পর ঢাকা সফরের প্রস্তুতি শুরু হয়।
সীমান্ত বিল পাস হবার পর নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন কিছু ইস্যু যুক্ত হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। মোদির সফরে বাণিজ্য, শিপিং, যোগাযোগ ও শিল্পক্ষেত্রে নতুন সহযোগিতা বা চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ভারত সরকার বাংলাদেশকে এক শ’ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে। এ ব্যাপারে চুক্তি সই হতে পারে মোদির সফরে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানান, মোদির ঢাকা সফরের সূচি কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। মোদির নির্দেশে পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করের ঢাকা সফর ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢাকা সফরে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে সবুজ সঙ্কেত ও তিস্তা নিয়ে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেবার পর দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৎপরতা শুরু করেছিল।
দিল্লির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, মোদি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে তিস্তা নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করবেন এমন একটি মত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দূত মারফত জানানো হলেও তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ২০১১ সালের খসড়া সম্পর্কে নতুন করে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা শুরু হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছেও আলোচনার কোনো প্রস্তাব আসেনি বলে নবান্ন (মমতার সরকারি কার্যালয়) সূত্রে বলা হয়েছে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী মোদির বাংলাদেশ সফরে থাকতে পারে একগুচ্ছ উপহার। মোদি কি উপহার নিয়ে আসছেন এ বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। বিজেপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশের জন্য মোদির এ ‘উপহারে’ থাকছে না দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নরেন্দ্র মোদির সফর উপলক্ষে কাজ শুরু হয়েছে। মোদির সফর নিয়ে এখন দিন-তারিখ চূড়ান্ত না হলেও জুনের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহকে সামনে রেখে তারা কাজ করছেন।
গত বছরের ১৮ মে নির্বাচনে জয় লাভের পর শুভেচ্ছা জানাতে তাকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময়ই তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। এরপর চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানান। মোদি প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান।
চলতি বছরের মার্চ মাসে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের সময় তার কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একটি চিঠি পাঠান মোদি। তাতে তিনি (মোদি) বাংলাদেশ সফরে আসার কথা জানান এবং সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের লোকসভায় স্থলসীমান্ত বিল পাস হবার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টেলিফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। দুই নেতা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ও সীমান্ত বিল পাসে সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকার ও জনগণের পক্ষে নরেন্দ্র মোদিকে সীমান্ত বিল পাসের জন্য ধন্যবাদ জানান। সীমান্ত বিল পাসের জন্য নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়সূচি নির্ধারণে দেরি হচ্ছিল।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর দুই দেশের জনগণের কাছেও প্রত্যাশিত। আগামী জুনেই তিনি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সমস্যা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং দুই দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকেই এ সব সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিবেশী দেশগুলো সফরের পরিকল্পনা নেন মোদি। এরই মধ্যেই তিনি নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন। এবার বাংলাদেশ সফরের পালা।