যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে সমাবেশ ১৬ মে: বিএনপির বিকল্প হতে চায় বাম দলগুলো
আন্দোলনের মাধ্যমে ‘রাজপথের বিরোধী দল’ বিএনপির বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হতে চায় সক্রিয় বাম দলগুলো। এ জন্য যৌন নিপীড়ন ইস্যুকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী নতুন কর্মসূচি দিয়েছে বাম দলগুলোর দুই জোট।
বাম দলগুলোর আট সংগঠনের জোট গণতান্ত্রিক বামমোর্চা যৌন নিপীড়ন ইস্যুকে সামনে রেখে ১৬ মে সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। রাজধানীর তোপখানা রোডের দলীয় কার্যালয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা দেয় জোটটি।
একই ইস্যুতে ওই দিন সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স সোমবার সিপিবি-বাসদের এই কর্মসূচির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাম দলগুলোর শীর্ষ একাধিক নেতা মনে করছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পেট্রোলবোমা আর জঙ্গিবাদী রাজনীতি করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত নেতাদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধ রাজনীতি বিএনপিকে তৃণমূল পর্যায়ে দুর্বল করে দিয়েছে। তাদের জনসমর্থন নেই, এটা তাদের আন্দোলন দেখেই অনুমান করা যায়।
তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষে রাজনীতির মূল স্রোতে ফেরা সম্ভব হবে না। তাই সরকারবিরোধী এই শূন্যস্থানে প্রগতিশীল বামপন্থীরাই কেবল বিকল্প শক্তি হতে পারে।
বাম দলগুলোর শীর্ষ নেতারা আরও জানান, আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী নীতি আর গণধিকৃত নির্বাচন তাদের জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নারী নির্যাতন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় সরকার এখন জনতার কাঠগড়ায়। জনগণ আওয়ামী লীগ থেকে নিষ্কৃতি চায়। তাই সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করলে আগামী নির্বাচনে এর সুফল বাম-প্রগতিশীল দলগুলোর ঘরে আসবে।
সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘জনগণ আওয়ামী লীগ থেকে নিষ্কৃতি চায়। তবে এর মানে এই না যে, তারা আবার বিএনপি-জামায়াত জোটকে ক্ষমতায় দেখতে চাচ্ছে। জনগণ এই দুই জোটের হাত থেকেই মুক্তি চাচ্ছে। আমরা জনগণকে সংগঠিত করে এই দুই জোটের বিরুদ্ধেই আন্দোলন গড়ে তুলব।’
রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, ‘শুধু সিপিবি-বাসদ জোটই নয়, অন্য প্রগতিশীল বাম দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে কথা বলবে সিপিবি-বাসদ। এর পর এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সরকারবিরোধী বাম-প্রগতিশীল বৃহত্তর জোট গঠনের ঘোষণা দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক বামমোর্চার সমন্বয়কারী ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ‘সরকার চরম ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ পরিচালনা করছে। জনগণ এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার জন্য সকল শ্রেণী-পেশার নাগরিককে অনুরোধ জানাচ্ছি। সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এখন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আছে। জনগণ এই সরকারের কাছ থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে। বিএনপি জনগণকে মুক্তির পথ দেখাতে ব্যর্থ। একমাত্র বাম-প্রগতিশীলরাই এখন সরকারবিরোধী জনমতকে ধারণ করতে পারেন। আমরা সে লক্ষ্যেই নতুন করে কর্মসূচি দিচ্ছি।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন ভিন্নমতকেও সহ্য করতে পারছে না। তারা চরম স্বৈরাচারী আর ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন করছে। আমরা বৃহত্তর গণআন্দোলনের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচনের দাবি আদায়ের কর্মসূচির দিকে যাচ্ছি। তবে আমাদের আন্দোলন পুরো নির্বাচনী কাঠামোর সংস্কার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার, যেটা বিএনপিকে দিয়ে সম্ভব নয়।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জনগণ এখন দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে জনগণের সঙ্গে ছিলাম, থাকব।’