ব্লগার হত্যাকারীদের কৌশলে অসহায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ব্লগার হত্যাকারীদের কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এলিট ফোর্স র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (ডিবি) ও পুলিশ ব্লগার হত্যাকাণ্ডের প্রধানদের গ্রেফতার করতে পারছে না। পুলিশের দাবি, ব্লগার হত্যাকারীরা মোবাইল ব্যবহার করে না। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হত্যার কথোপকথন হয়। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান কৌশল কোনো কাজে আসছে না।
পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ব্লগাররা ধর্মীয় উগ্রবাদীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। ব্লগারদের টার্গেট করে তারা ফেসবুক ও টুইটারে ছবিতে লাল ক্রসচিহ্ন দিয়ে পোস্ট দিচ্ছে। পরবর্তীকালে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্র ধরে চার ব্লগারকে যারা হত্যা করেছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে৷
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ব্লগার হত্যার ঘটনায় তদন্ত চলছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার আগাম ব্যবস্থা নিতে আমরা চেষ্টা করছি।
সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে সিলেটে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে মুক্তমনা ব্লগের আরেক ব্লগার, লেখক ও ব্যাংকার অনন্ত বিজয় দাশকে। এর আগে গত ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার বেগুনবাড়ি এলাকায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার সময় আরেক ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা৷
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাসায় ফেরার পথে পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে একই ভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে৷
এর আগে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার সময় প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ূন আজাদকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা৷ পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জার্মানীতে তার মৃত্যু হয়৷
এর মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন হত্যা মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে দ্রুত বিচার আদালতে বদলি করা হয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে মামলাটি দ্রুত বিচার-৩ আদালতে বদলি করা হয়। এখন থেকে এ মামলার কার্যক্রম দ্রুত বিচার-৩ এর বিচারক সাঈদ আহমদের আদালতে পরিচালিত হবে।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাসায় ফেরার পথে পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে আততায়ীর হাতে নিহত হন রাজীব হায়দার শোভন। এ ঘটনায় রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দীন পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ সিএমএম আদালতে ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ৫৫ জনকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, মামলার আসামি আনসারুল্লা বাংলাটিমের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। মামলার অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতেন। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়। জসীম উদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে ‘নাস্তিক ব্লগার’দের খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন। রাহমানীকে এ হত্যায় উৎসাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া অন্য দুই ব্লগার অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার ঘটনায় মামলার তদন্ত চলছে। ঘটনার রহস্য এখানো অন্ধকারে রয়েছে।
ব্লগার হত্যারকারীদের গ্রেফতার সম্পর্কে পুলিশের প্রধান (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ব্লগার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আইজিপি আরও বলেন, এ সব ঘটনা প্রতিহত করার পাশাপাশি জঙ্গি দমনের জন্য কাউন্টার টেরোরিজম ব্যুরো নামে পুলিশের একটি ইউনিট গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এ ইউনিট গঠন করা হলে এ সব ঘটনা আরও দ্রুত প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, সিলেটে ব্লগার হত্যার খবর পেয়ে র্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ হত্যাকারীদের গ্রেফতারে তারা কাজ করছে।