যেভাবে মানসিক হাসপাতালে সালাহ উদ্দিন
উসকো খুসকো চুল, ময়লা জামাকাপড়; চেহারা পুরোপুরি বিধ্বস্ত। পুলিশের জিপ দেখে ইতস্তত করে জোরে জোরে এদিক-সেদিক হাঁটাহাঁটি করছিলেন। পুলিশের ধারণা, লোকটি উন্মাদ কিংবা আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন।
ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ের গালফ লিংক এলাকার রাস্তায় সোমবার এভাবেই পাওয়া যায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে। পরে পুলিশ তাকে আটক করে মেঘালয়ের একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে।
গত ১০ মার্চ রাতে ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে নিখোঁজ হন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এর পর তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তার স্বামীকে ওই বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার ৬২ দিন পর সোমবার সকালে মেঘালয় পুলিশ তাকে আটক করে। মঙ্গলবার হাসিনা আহমেদ জানান, মেঘালয়ের একটি হাসপাতাল থেকে তার স্বামী সালাহ উদ্দিন তাকে ফোন করেছেন।
মেঘালয় পুলিশ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে সেখানকার ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেঘালয় পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে মেঘালয়ের গালফ লিংক এলাকায় ঘোরাফেরার সময় সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করে পুলিশ। তখন তার চেহারা ছিল সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। সালাহ উদ্দিন পুলিশের জিপ দেখে ইতস্তত করে এদিক সেদিক জোরে হাঁটাহাঁটি শুরু করেন। এতে পুলিশের সন্দেহ হয়। পুলিশ ধারণা করে লোকটি হয়তো আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। সেই ধারণা থেকেই সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা।
মেঘালয় পুলিশকে সালাহ উদ্দিন জানান, তিনি বাংলাদেশের বৃহত্তর দল বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদও একজন নেত্রী। তখন পুলিশ তার কাছে বৈধ কাগজ দেখতে চাইলে সালাহ উদ্দিন তা দেখাতে ব্যর্থ হন। এর পর মেঘালয় পুলিশের জেরায় সালাহ উদ্দিন বার বার নিজের একই রাজনৈতিক পরিচয় দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে মানসিক ভারসাম্যহীন ভেবে গ্রেফতার করে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করে।
হাসপাতালে ডাক্তারদের সালাহ উদ্দিন জানান, তিনি পাগল বা মানসিক রোগী নন। বাংলাদেশের বিএনপি নামের রাজনৈতিক দলের বড় একজন নেতা তিনি। এর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মঙ্গলবার সকালে ঢাকার বাসায় ফোন করে মেঘালয়ে অবস্থানের কথা জানান সালাহ উদ্দিন।
মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মানসিকভাবে সুস্থ ঘোষণা করেন। এর পর তাকে মেঘালয় সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ভারতের মেঘালয়ের শিলং থেকে সে দেশের পুলিশ আটক করেছে বলে স্থানীয় দ্য শিলং টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে।
‘বাংলাদেশী ম্যান হেল্ড’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে পত্রিকাটি বলছে, সোমবার সকালে একজন বাংলাদেশীকে আটক করেছে পুলিশ। সালাহ উদ্দিন আহমেদ (৫৪) নামে ওই বাংলাদেশীকে শিলংয়ের গলফ লিংক নামক এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ তার ব্যাপারে তদন্ত করছে।
এদিকে বাংলদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ জানান, সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ জানান, মেঘালয়ের শিলংয়ে একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত স্বামীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে।