ভিনদেশি ফর্মুলা চাপিয়ে দেবেন না টেরি
তাঁর কাজের নির্দিষ্ট একটি ধরন আছে অবশ্যই। তবে সেটি চাপিয়ে না দিয়ে পল টেরি বরং তাঁর কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের ভাবনাকে এক সুতোয় গেঁথেই কাজ করার পক্ষপাতী। বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে সেটিই সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হবে বলেও বিশ্বাস করেন জার্মানিতে জন্ম নেওয়া এ সাবেক ইংলিশ টেস্ট ক্রিকেটার। নিজের কথার সপক্ষে জুতসই এক ‘মডেল’ও তুলে ধরতে পারলেন। আর সেটি খোদ বাংলাদেশ দলই, ‘নানামুখী ভাবনার মিশেল বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নেবে বলে আমি আশা করছি। কাজের ধরন হবে অনেকটা বাংলাদেশ দলের মতো। এই দলের সাপোর্ট স্টাফদের দিকে তাকান। শ্রীলঙ্কান (চন্দিকা হাতুরাসিংহে) হেড কোচ, বোলিং কোচ একজন জিম্বাবুইয়ান (হিথ স্ট্রিক) এবং ইংলিশ (রিচার্ড হ্যালসাল)।’
জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির ডিরেক্টর অব কোচিং পদে মাত্রই যোগ দেওয়া টেরির রয়েছে দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ার। কাউন্টি দল হ্যাম্পশায়ারের হেড কোচ ছিলেন অর্ধযুগ। কোচিং ক্যারিয়ারের কিছুটা সময় কেটেছে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াতেও। তাই বাংলাদেশেও ইংলিশ কিংবা অস্ট্রেলিয়ান ফর্মুলা অনুসরণ করে কাজ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবেই ‘বহুজাতিক’ ভাবনায় সফল বাংলাদেশ দলকে টেনে এনেছেন আলোচনায়। একই সঙ্গে নিজের মতের সঙ্গে পরমতের মেলবন্ধনের কথাও বলেছেন, ‘যদি বলি এখানে আমার কাজের ধরন হবে ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো, তাহলে সেটি বোকামিই হবে। এখানে আমার কাজ হলো কোচ এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটও খুব ভালো সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এখানে আমার নিজের মতো করে এগোলে সেটি কাজে নাও দিতে পারে। তাই আমার কর্মপন্থায় অনেকের সম্পৃক্ততা থাকবে।’
সুফল পেতে জাতীয় একাডেমির অধীনে এইচপি (হাই পারফরমেন্স) ইউনিটের হেড কোচের সঙ্গে তাঁর পার্টনারশিপও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অচিরেই চালু হতে যাচ্ছে এইচপির কার্যক্রম। জাতীয় দলের বাইরে ছিটকে পড়া এবং সম্ভাব্যদের নিয়ে ২০-২২ জনের একটি দল ঘোষিত হওয়ার কথা কয়েক দিনের মধ্যেই। একই সঙ্গে ১৫-১৭ জন পেসারকে নিয়েও কার্যক্রম শুরুর কথা আছে। বেশ কিছুদিন ধরে নিষ্ক্রিয় এইচপি আবার সক্রিয় করার আগে হেড কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া একটু বিলম্বিত হচ্ছে। কারণ বিসিবির সঙ্গে আলোচনা বেশ কিছুদূর এগোনোর পর অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিস্টার ডি উইন্টার তাঁর অপারগতার কথা জানিয়ে দেওয়ায় এখন অন্য কারো কথা ভাবতে হচ্ছে। গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ অবশ্য জানিয়েছেন, ‘উইন্টার বলেছিলেন স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত করবেন। খুব সম্ভবত পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় তিনি আসতে চাইছেন না। আশা করছি, এইচপির হেড কোচের নিয়োগ সপ্তাহখানেকের মধ্যেই চূড়ান্ত করা যাবে।’
এর আগেই বিসিবির সঙ্গে পরীক্ষামূলকভাবে বছরে ১০০ দিন কাজ করার চুক্তিতে আসা টেরির লক্ষ্য উন্নয়ন কর্মসূচির দীর্ঘস্থায়িত্ব, ‘আশা করছি এই কর্মসূচিটা টেকসই হবে। এটা থেকে সুফল পেতে হবে আমাদের। এই কর্মসূচির আওতায় যারা থাকবে, তারা যেন শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে খেলতে পারে। আমাদের কাজ হবে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে উঠে আসা ক্রিকেটারদের পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার পথ দেখানো। সেটি করার জন্য পরিকল্পনা, অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করব আমরা। যাতে ওরা নিজেদের পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগটা পায়। যদি আমরা তা করতে পারি, তাহলে এই কার্যক্রমও স্থায়িত্ব পাবে।’ এইচপি দল এখনো ঘোষণা হয়নি বলে টেরি ঠিক জানেন না কাদের পেতে চলেছেন। তবে তিনি নিশ্চিত যে, ‘এখন যারা টেস্ট এবং ওয়ানডে খেলছে, এইচপির খেলোয়াড়রা খুব সম্ভবত এর ঠিক পরের পর্যায়েরই হবে। এটি ওদের জন্য হবে অনেক বড় এক সুযোগ। আশা করছি, ওরা এখানে এসে অবশ্যই নিজ নিজ দক্ষতা বাড়াতে সর্বোচ্চ শ্রম ঢেলে দেবে এবং দুর্দান্ত একেকজন ক্রিকেটার হয়ে উঠবে।’ টেরিও নিশ্চয়ই নানা মতের সংমিশ্রণেই তরুণদের সেই পথটি দেখাতে চাইবেন!