প্রধানমন্ত্রী কাঁদলেন, কাঁদালেন
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের শুভেচ্ছায় স্নাত হলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন অন্যদের।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাস ভবন গণভবনে রবিবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট একরাতে বাবা-মা, ভাইসহ সব হারানোর বেদনার কথা এবং সবাইকে হারিয়ে দেশে ফেরার ক্ষণটির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার আবেগে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
এক পর্যায়ে দু’চোখ জলে ভরে উঠলে পুরো অনুষ্ঠানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিচারণ শুনতে গিয়ে অনেক নেতাকর্মীই চোখের অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি।
এ সময় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনার পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, জ্বালাও-পোড়াওকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, হারাবারও ভয় নেই। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে যে মর্যাদা ও ভালবাসা দিয়েছে, তাদের কল্যাণে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমি প্রস্তুত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে, নীতি-আদর্শ নিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আল্লাহ কিছু কাজ করার জন্য মানুষকে পাঠান। সেই কাজ আমি করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশে ফেরার পর আমার ওপর বার বার আঘাত এসেছে, কিন্তু কখনো ঘাবড়াইনি, ভয় পাইনি। মানুষের কল্যাণে আমি যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগলিক অবস্থান থেকে সারাবিশ্বের কাছেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের দরবারে আমরা দেশকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছি। রাজনৈতিক জীবনে অনেক বীভৎস ঘটনা দেখেছি। আমরা চাই না দেশে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি ঘটুক। দেশের মানুষ যে ভালবাসা ও মর্যাদা আমাকে দিয়েছে, সেটা কখনো ভোলার নয়। আমি দেশের মানুষের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাইকে হত্যার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু দেশের মাটিতে পা রাখার আগে বুঝতে পারিনি আমার জন্য কতটা কষ্ট ও বেদনা জমা রয়েছে। স্বামীর কর্মস্থলে যাওয়ার আগে বাড়িতে বাবা, মা, রাসেল, জামাল, কামাল সবাইকে রেখে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরে এসে কাউকে আর পাইনি। মানুষ একজন স্বজন হারানোর বেদনা ভুলতে পারে না। কিন্তু আমাদের দু’বোনকে সব হারানোর বেদনা সয়ে চলতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা আমাকে ছয়টি বছর দেশে আসতে দেয়নি। যখন দেশে এলাম, তখন বিমানবন্দরে লাখ লাখ মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এতো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হলাম, কিন্তু আমার চোখ ঘুরে ফিরছিল পরিবারের সেই চেনা মুখগুলো খুঁজতে। কিন্তু কাউকে খুঁজে পাইনি। আমি যখন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেই, তখন দলের নেতারা আমাকে সভানেত্রীর দায়িত্ব দেন। দেশে ফিরে অসহ্য বেদনার মধ্যেও প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম- এ সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্ত যাতে বৃথা না যায় সেই কাজ করতে। আমি সেই থেকে দেশের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমি কাজ করে যাচ্ছি, এ জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতেও আমি প্রস্তুত।’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর একে দলের সকল সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা জানান। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় মঞ্চে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সতীশ চন্দ্র রায়, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতাই উপস্থিত ছিলেন।