তিন সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি : টিআইবি
ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রাজধানীর ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে সোমবার দুপুরে তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি এ তথ্য প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন কার্যত একটি দলীয় নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী নির্বাচন ও সমর্থন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দলীয় সমর্থন নেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনে বাধ্য করা, সরকারের পক্ষ থেকে সরকারসমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংসদ সদস্যদের ক্ষমতার ব্যবহার ও প্রভাব বিস্তারের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে দৃঢ়তা দেখাতে না পারা, নির্বাচনী আইন সব প্রার্থীদের জন্য সমানভাবে প্রয়োগ না হওয়া ও আচরণবিধি লঙ্ঘনে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের কারণে নির্বাচনে সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়। প্রার্থীদের পক্ষ থেকেও আচরণবিধি মেনে না চলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের নির্ধারিত ব্যয়সীমার অতিরিক্ত ব্যয় ও আচরণবিধি লঙ্ঘন লক্ষণীয়। সার্বিক বিবেচনায় তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলা যায় না।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও টিআইবির ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচনের পর থেকে আমরা যে তথ্যগুলো শুনেছি, সেগুলোই এ প্রতিবেদনে এসেছে। প্রতিবারই দেখা যায়, আইনে আছে এক রকম, আমরা করি আরেক রকম। আইনে বলা হয়েছে, দলীয় হবে না। তবে এর আগেও আমরা দেখেছি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় সমর্থন থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে মহিলাদের অংশগ্রহণ অনেক কম হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণভাবেই নির্বাচনের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সাংঘাতিক ব্যাপার। সিংহভাগ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ছিল না। এটি সাংঘাতিক ব্যাপার। কারণ পোলিং এজেন্টই সঠিক ভোটারদের চিনতে পারে। পোলিং এজেন্ট ছাড়া জাল ভোটার চেনা যায় না।’
‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন থাকলে এত অভিযোগ হতো না বলেও জানান তিনি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারা দৃঢ়তা দেখাতে পারেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের পেশাগত দায়িত্বের বাইরে ভোট জালিয়াতিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।’
‘এবারের নির্বাচনে ভোটারদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপির তেমন কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে অবশ্যই স্বাধীন একটি নির্বাচন কমিশন থাকতে হবে। কমিশন দৃঢ় ও শক্তিশালী হতে হবে। সার্বিক বিবেচনায় তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি।’
টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক শাহজাদা এম আকরামসহ আরও অনেকেই এ সময় উপস্থিত ছিলেন।