‘কত কেরামতি জানো রে বান্দা কত কেরামতি জানো!’ আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
ছোটবেলায় গ্রামবাংলায় একটা ছড়া শুনতাম। ‘কত কেরামতি জানো রে বান্দা, কত কেরামতি জানো, মাঝ দরিয়ায় ফেইল্যা জাল ডাঙায় বইস্যা টানো।’ এই গ্রাম্য ছড়ার অর্থ তখন বুঝতাম না, এখন বুঝি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের নতুন নেতা আমেরিকা কয়েক দশক ধরে যেসব খেলা খেলছে, তা দেখে আমাদের গ্রাম্য ছড়ার মর্মার্থ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। এখনো করছি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন প্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এবং এতকালের রুগ্ণ চীনও এশিয়ায় একটি সাব-সুপার পাওয়ার হিসেবে মাথা তুলতে যাচ্ছে তখন আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী কৌশলের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা আমরা দেখলাম। রাশিয়া ও চীন দুটিই কমিউনিজমের আদর্শে বিশ্বাসী রাষ্ট্র। এই দুটি দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নাভিশ্বাস শুরু হতো। কিন্তু তা হতে পারল না সাম্রাজ্যবাদীদের চানক্য বুদ্ধির ফলে। রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সামান্য তত্ত্বগত বিরোধ ছিল। কৌশলে সেই বিরোধকে দুটি কমিউনিস্ট দেশের মধ্যে সীমান্ত ও সামরিক বিরোধে পরিণত করে আমেরিকা।
ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তি শিবির সোভিয়েত ইউনিয়ন বিপর্যস্ত হয়। নয়াচীন দীর্ঘকাল মার্কিন মিত্রতার ওপর নির্ভরশীল থাকার পর এখন আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে মাথা তুলছে। সামরিক শক্তিতেও বলীয়ান হয়ে উঠছে। এই কমিউনিস্ট চীনের মন জয় করার জন্য আমেরিকা তার দীর্ঘকালের বন্ধু করমোজাকে ত্যাগ করতে ও জাতিসংঘ থেকে তাড়াতে দ্বিধা করেনি। এখন চীন যখন নিজের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠছে এবং আমেরিকার বিশ্ব আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যাচ্ছে তখন ওয়াশিংটন এতকালের বৈরী ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে চীনের বিরুদ্ধে তাকে খেলানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এই খেলা সফল করার জন্য আমেরিকার কাছে পাকিস্তান এখন আর সুয়োরানি নয়।
মধ্যপ্রাচ্যেও আমেরিকা একই খেলা খেলছে। এতকাল এই এলাকার দেশগুলোকে কবজায় রাখার জন্য ইসরায়েলকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেছে। রাজা, বাদশাহ ও শেখ শাসিত দেশগুলোকে হাতের মুঠোয় রেখে এলাকার জনগণের স্বার্থ ও অধিকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছে। চীন ও রাশিয়ার মতো দুই কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ বাঁধানোর নীতি অনুসরণ করে একই ইসলাম ধর্মের অনুসারী শিয়া ও সুন্নি দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে চরম শত্রুতা সৃষ্টি করেছে। আরবদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইসরায়েল। কিন্তু সুন্নি রাষ্ট্র সৌদি আরব আমেরিকার চালে পড়ে বড় শত্রু হিসেবে বেছে নিয়েছে শিয়া রাষ্ট্র ইরানকে। এমনকি এই ইরানকে ধ্বংস করার জন্য সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে পর্যন্ত আঁতাত করেছে। অতি সম্প্রতি সৌদি আরব ও ইসরায়েল মিলে আমেরিকার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল, আমেরিকা যাতে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়।
এখানেও আমেরিকার শঠতা ও দ্বিচারিতার কোনো শেষ নেই। আমার পাঠকদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে, শিয়া রাষ্ট্র (এবং তখন আমেরিকার চরম বৈরী) ইরানকে ধ্বংস করার জন্য যখন ইরাকের সুন্নি প্রভাবিত সাদ্দাম হোসেনের সরকারকে আমেরিকা যুদ্ধে নামিয়েছে এবং সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতসহ সুন্নি দেশগুলো সাদ্দাম হোসেনকে সাহায্য জোগাচ্ছে, তখনো আমেরিকা ‘কনের ঘরের মাসি ও বরের ঘরের পিসি’ সেজে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে চরম দ্বিচারিতার পরিচয় দেখিয়েছে। একদিকে সাদ্দাম হোসেনকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রকাশ্যে সাহায্য দান, অন্যদিকে ইরানের কাছে গোপনে অস্ত্র বিক্রির চেষ্টা সে সময় ‘ইরানগেট কেলেঙ্কারি’ নামে পরিচিত হয়।
এই ইরানগেট কেলেঙ্কারির মূল কেন্দ্র ছিল একেবারে ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউস। রিগ্যান তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। এই ইরানগেট কেলেঙ্কারির জন্য প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও কথা উঠেছিল। বয়স ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা বিবেচনা করে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বর্তমানে ওবামা প্রশাসনের আমলেও আমেরিকা একই খেলা খেলছে। ইরানের শান্তিপূর্ণ আণবিক গবেষণার কাজকে পরমাণু বোমা বানানোর চেষ্টা আখ্যা দিয়ে (সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তাঁর হাতে বিশ্ববিধ্বংসী মারণাস্ত্র আছে এই মিথ্যা অজুহাত দেখানোর মতো) অর্থনৈতিক অবরোধ থেকে শুরু করে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিতেও ওয়াশিংটন কসুর করেনি। ইরান নতজানু হয়নি। বরং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার ইরাক যুদ্ধের পর ইরানের প্রভাব বেড়েছে এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইরান একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে মাথা তুলছে। ইরানের বিরোধিতার জন্যই সিরিয়ায় আসাদ রেজিমকে হটানোর চেষ্টায় আমেরিকা সফল হয়নি। বরং আসাদ রেজিমকে হটানোর জন্য আইএস নামে যে সুন্নি টেররিস্ট বাহিনী আমেরিকা ও সৌদি আরব মিলে গড়ে তুলেছিল, সেই বাহিনী এখন আমেরিকার জন্যই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বর্বর ঘাতক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার এখন ইরানের সাহায্য ও সমর্থন দরকার। আমেরিকা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চায়। এতকালের মিত্র সৌদি আরব ও ইসরায়েলের আপত্তি অগ্রাহ্য করে ওবামা প্রশাসন পরমাণু শক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে ইরানকে ছাড় দিয়ে সন্ধি করতে এগিয়েছে এবং আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরানের সহযোগিতা নিচ্ছে। তাতে আইএসের মতো শত্রু বধ হতে পারে; কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইরান একক আঞ্চলিক শক্তি হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং এক ঢিলে আইএস বধ করে সেই ঢিলেই ইরানকেও কাবু করার গোপন চেষ্টা চালাচ্ছে ওয়াশিংটন। এটা সেই দেশেরই এক দল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের ধারণা।
গত ১৭ মে রবিবার লন্ডনের সানডে টাইমস পত্রিকা একটি খবর ছেপেছে, Saudis to get nuclear weapons (সৌদিরা পরমাণু বোমা পাচ্ছে)।
তারা নিজেরা বোমা বানাতে পারে না, অদূর ভবিষ্যতে বানাতে পারবে তার সম্ভাবনা নেই। তাহলে হঠাৎ করে তারা কোথা থেকে বোমা পাবে? সানডে টাইমস সে খবরটিও দিয়েছে। পাকিস্তান ৩০ বছর ধরে পরমাণু অস্ত্র তৈরির যেসব গবেষণা করেছে, তার পুরো অর্থ সাহায্যই এসেছে সৌদি আরব থেকে। এ ব্যাপারে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে যে চুক্তি রয়েছে, সেই চুক্তি অনুযায়ী সৌদি আরব এই অস্ত্র পাবে অথবা পেয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এখনো নিশ্চিত নন সৌদিরা ইতিমধ্যে পরমাণু অস্ত্র অথবা টেকনোলজি পাকিস্তানের কাছ থেকে পেয়ে গেছে কি না।
সম্প্রতি সৌদি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের সাবেক প্রধান কর্মকর্তা প্রিন্স টার্কি বিন ফয়সাল, যিনি একসময় লন্ডনে ও ওয়াশিংটনেও সৌদি রাষ্ট্রদূত ছিলেন, প্রকাশ্যে গর্ব করে বলেছেন, whatever the Iranians have, we will have too (ইরানিরা যা-ই পেয়ে থাকুক, আমরাও তা পাব)। বলাবাহুল্য, পরমাণু অস্ত্রের প্রশ্নেই তিনি এ কথা বলেছেন। তাতে থলের বিড়াল বেরিয়ে গেছে। এত দিন যে বলা হচ্ছিল পাকিস্তান পরমাণু বোমা বানাচ্ছে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য বা সৌদি আরব এই বোমা বানানোর ব্যাপারে পাকিস্তানে দুই হাতে টাকা ঢালছে ইসরায়েলকে প্রতিরোধ করার জন্য, তা এখন অসত্য প্রমাণিত হলো। মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি মুসলিম দেশ ইরানকে শায়েস্তা করার জন্যই মূলত এই অস্ত্র তৈরি হচ্ছে।
আমেরিকার সেই পুরনো খেলা এখানেও স্পষ্ট। আগে ছিল কমিউনিস্ট রাষ্ট্র রাশিয়া ও চীনকে পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলিয়ে দুটিকেই ধ্বংস করার চেষ্টা; এখন মধ্যপ্রাচ্যে দুটি মুসলিম রাষ্ট্রের (একটি শিয়া ও অন্যটি সুন্নি) মধ্যে সংঘাত বাধিয়ে দিয়ে দুটিকেই ধ্বংস করে মার্কিন স্বার্থ ও ইসরায়েলকে নিরাপদ করা। ইসরায়েলকে এখন আর নতুন করে আগ্রাসী ভূমিকায় নামার দরকার নেই। আমেরিকা শিয়া-সুন্নি বিরোধ বাধিয়ে ইরাক ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ চালিয়েছে আট বছর (দ্বিতীয় মহাযুদ্ধও এত দীর্ঘকাল চলেনি)। আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে যাওয়া ইরাক ধ্বংস হয়েছে। এখন ইরান লক্ষ্যস্থল।
দীর্ঘদিন ইরানের শত্রুতা করে আমেরিকা সফল হয়নি। এবার মিত্রের বেশ ধরে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এটাই সেই কুখ্যাত কিসিঞ্জার পরিকল্পনা, যে পরিকল্পনা অনুযায়ী চীনের সঙ্গে শত্রুতা ত্যাগ করে আমেরিকা হঠাৎ তার মিত্র সেজেছিল এবং ঘোষণা করেছিল, চীন হচ্ছে তার ‘মোস্ট ফেভারিট ট্রেড পার্টনার’। ওয়াশিংটন সামরিক সহযোগিতাও শুরু করেছিল বেইজিংয়ের সঙ্গে। কিন্তু তলে তলে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছিল মিত্র কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাতের জন্য চীনের সুধীসমাজের মধ্যে (বাংলাদেশের সুধীসমাজের মতো) ডিসিডেন্টস তৈরি এবং ছাত্র ও যুবকদের দ্বারা তিয়েনআনমেন বিদ্রোহের মতো রক্তাক্ত বিদ্রোহ সংঘটন।
মধ্যপ্রাচ্যেও বর্তমানে একই ডাবল গেমস খেলছে ওবামা প্রশাসন। কিউবার মতো ইরানের সঙ্গেও এত দিনের শত্রুতা মিটিয়ে দেশটির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করতে এগিয়েছে। এ ব্যাপারে পুরনো মিত্র ইসরায়েল ও সৌদি আরবের আপত্তি তারা গায়ে মাখেনি। যেমন অতীতে নয়াচীনের সঙ্গে কৌশলের মৈত্রী করতে গিয়ে পুরনো মিত্র তাইওয়ানের আপত্তি আমেরিকা গায়ে মাখেনি। কিন্তু চীনের শত্রুতা করার জন্য তাইওয়ানকে টিকিয়ে রেখেছে।
সৌদি আরবে চলতি বছর পর্যন্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ছিলেন স্যার জন জেনকিন্স, তিনি বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে এমন একটি সন্দেহ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে সুন্নিদের স্বার্থের বিরুদ্ধে শিয়া রাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে আমেরিকার একটা আঁতাত হয়েছে। দু-তিন বছর ধরে সৌদিরা ভাবতে শুরু করেছিল তারা ওই এলাকার সুপার পাওয়ার। কিন্তু ৮০ মিলিয়ন ইরানির বিরুদ্ধে তাদের সংখ্যাশক্তি মাত্র ২০ মিলিয়ন।’
আমেরিকা কৌশলে আঞ্চলিক সুপার পাওয়ার হিসেবে সৌদি আরবের আত্মশ্লাঘায় আঘাত দিয়ে ইরান সম্পর্কে তাকে আরো শঙ্কিত করে তুলেছে এবং ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করতে গিয়ে সৌদি আরবকেও পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়ার জন্য উসকে দিয়েছে। যদি মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু যুদ্ধ হয়, তাহলে দুটি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে হবে। সে ক্ষেত্রে মার্কিন স্বার্থ ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা- দুই-ই নিরাপদ।
ইরানের জনশক্তি ও পরমাণুশক্তি সম্পর্কে সৌদি আরবের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে আমেরিকাই। সৌদিতে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার জন জেনকিন্সও তাঁর বক্তব্যে সে কথারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। সৌদি আরব যে পাকিস্তানের কাছ থেকে পরমাণু অস্ত্র অথবা টেকনোলজি পেতে যাচ্ছে অথবা পেয়ে গেছে, সে কথাটা বিশ্বময় প্রচার করছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই।
এখন প্রশ্ন, সৌদি আরব ও পাকিস্তান এই দুটি রাষ্ট্রই আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র। বলতে গেলে স্যাটেলাইট স্টেট। ৩০ বছর ধরে সৌদি অর্থে পাকিস্তান পরমাণু বোমা বানাচ্ছে এবং তার ওয়ারহেডস মজুদ করেছে- এ খবরও আমেরিকার জানা। তাহলে পরমাণু অস্ত্রের এই প্লোরিফিকেশনে আমেরিকা এত দিন কেন বাধা দেয়নি? এখনো সৌদি আরবে এই অস্ত্র রপ্তানির ব্যাপারে পাকিস্তানকে নিবৃত্ত করছে না কেন?
ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের হাতে বিধ্বংসী মারণাস্ত্র আছে এই কল্পিত জুজুর ভয়ে আমেরিকা দু-দুটি গালফ যুদ্ধ করেছে। ইরানকে পরমাণু অস্ত্রের গবেষণা থেকে নিরস্ত্র রাখার জন্য অর্থনৈতিক অবরোধ চালিয়েছে, সামরিক শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছে। আর আমেরিকার নাকের ডগায় বসে পাকিস্তান পরমাণু বোমা বানাচ্ছে ও এখন তা বিশ্ব শান্তির জন্য বিপজ্জনক এলাকা মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে রপ্তানি করতে যাচ্ছে, তাতে আমেরিকা সামান্যতম বাধা দিতেও এগোচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের জবাব হিসেবে যদি কেউ ভাবেন, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার ভূমিকাটি নারদ মুনির, তাহলে অন্যায় হবে কি?
একদিকে আমেরিকা ইরানের সঙ্গে পরমাণুসংক্রান্ত চুক্তি করছে, অন্যদিকে সেই চুক্তি দ্বারা সৌদি আরবের মনে ভয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করে তাকেও পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়ার পথে এগিয়ে দিচ্ছে। আর সৌদি আরবকে এই পরমাণু অস্ত্র অথবা টেকনোলজি সরবরাহ করছে আমেরিকারই আরেকটি আজ্ঞাবাহী দেশ পাকিস্তান। এই ব্যাপারে যে আমেরিকারই পরোক্ষ সায় ও সমর্থন নেই তা কে বলবে?
পাকিস্তান অবশ্য এখনো বলছে, তারা সৌদি আরব বা অন্য কোনো দেশে কখনো পরমাণু টেকনোলজি পাঠায়নি। কিন্তু পশ্চিমা সামরিক বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন, সৌদি আরব পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হতে চাচ্ছে এবং পাকিস্তান তাকে সেই অস্ত্র জোগাবে। এখন কেবল ভবিষ্যতেই জানা যাবে আমেরিকার এই বিপজ্জনক দুমুখো নীতি মধ্যপ্রাচ্যে আবার কী নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে!
লন্ডন, সোমবার, ১৮ মে ২০১৫