বরখাস্ত হতে পারেন যশোরের মেয়র
যশোর পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হতে পারে। একটি রাজনৈতিক মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি হিসেবে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে যশোরের জেলা প্রশাসক এই তথ্য স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব গত সপ্তাহে যশোর জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবীরকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে যশোর পৌরসভার মেয়র নিয়মিত অফিস করছেন কিনা, জেলা প্রশাসককে তা জানাতে বলা হয়। জেলা প্রশাসক মঙ্গলবার পর্যন্ত চিঠির জবাব দেননি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে তিনি জবাব দেবেন। জেলা প্রশাসকের চিঠি মন্ত্রণালয়ে পৌঁছানোর পর মেয়রের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
গত বছরের ১ অক্টোবর স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জেলা বিএনপি মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ধর্মবিদ্বেষী বক্তব্যের প্রতিবাদে কর্মসূচিটি ডাকা হয়েছিল। তবে বিএনপি ওই কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। কর্মসূচি শুরুর আগেই পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও গুলি চালিয়ে তা পণ্ড করে দেয়। এই ঘটনায় কোতয়ালী থানার এসআই শেখ আজগার আলী বাদী হয়ে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় জেলাজুড়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ১২৫ জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে যশোর পৌরসভার মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলামও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল এই মামলাটির অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়েছে আদালতে। এতে অন্যদের সঙ্গে মেয়র মারুফুল ইসলামকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে যশোর পৌরসভার মেয়রকে বরখাস্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
যশোর পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলামকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিনা জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবীর সরাসরি জবাব দেননি।
তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আবার শুরু হয়নি দুটিই বলা যেতে পারে।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি আসার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ওই চিঠিতে বিভিন্ন প্রশ্ন আছে। তার মধ্যে একটি হলো পৌরসভার মেয়র নিয়মিত অফিস করেন কি-না।’
‘আমি এখনো চিঠির জবাব দিইনি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে দেব।’- যোগ করেন জেলা প্রশাসক।
যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার দফতরের এখতিয়ারভুক্ত নয়। এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা বা চিঠিপত্র আমার হাতে আসেনি। আমিও সরকারের কোনো দফতরে লিখিত কিছু জানাইনি। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট। চিঠিপত্র এলে সেখানেই আসার কথা।’
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘মেয়রের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল হয়েছে। অন্যগুলো তদন্তাধীন রয়েছে।’
যশোর পৌরসভার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, মেয়র মারুফুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ তেমনটিই চাইছেন। ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও বিএনপি নেতা শাকিল আহমেদ নাকি এ ব্যাপারে বেশ তৎপর। গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে দু’দিন ধরে তিনি মেয়রের গাড়ি ব্যবহারও শুরু করেছেন।
তবে ভারপ্রাপ্ত মেয়র (প্যানেল মেয়র-১) শাকিল আহমেদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কি হচ্ছে না, তার কিছুই আমি জানি না। ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে প্রচণ্ড ধকল যাচ্ছে। তাই গাড়ি ব্যবহার জরুরী হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি দুই দিন ধরে মেয়রের গাড়ি ব্যবহার করছি।’
পৌরসভার সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন শুনছি। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো সরকারি নির্দেশনা পাইনি। এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা এলে তা প্রথম আমার কাছেই আসবে।’
৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাও মেয়রকে বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে গুঞ্জন রটেছে তা স্বীকার করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত মেয়র হওয়ার খায়েশ আমার নেই। আমি সুযোগসন্ধানী নই।’
প্রসঙ্গত, ১২-১৩টি মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে ফেরার জীবনযাপন করছেন পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলাম। তবে পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম এখনো তিনিই দেখাশোনা করেন অজ্ঞাত স্থান থেকে। গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে সই-স্বাক্ষরও করছেন তিনি।
জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়ার কথা শুনেছি। তবে বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে জানি না। আইনগত নয়, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই এ সব করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘একটি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল হয়েছে। কিন্তু আমার জানামতে, আদালত এখনো চার্জশিট গ্রহণ করেননি। ফলে এই অবস্থায় আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা হবে পুরোপুরি বেআইনী।’
প্রসঙ্গত, মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ায় সম্প্রতি রাজশাহী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন মেয়রকে বরখাস্ত করা হয়েছে।