ঋণে অনিয়ম>>> ফারমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান চিশতীকে অপসারণের নির্দেশ
ঋণ প্রদানে অনিয়মের কারণে ফারমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতীকে নির্বাহী কমিটি থেকে অপসারণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রবিবার (১৭ মে) ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রেরিত চিঠিতে আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ফারমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতীর একক ক্ষমতায় মতিঝিল ও গুলশান করপোরেট শাখা থেকে কয়েকটি প্রাইভেট কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া হয়। কোনো ধরনের দাফতরিক প্রক্রিয়া ছাড়াই মাহাবুবুল হক চিশতীর লিখিত নির্দেশে গুলশান শাখা থেকে সাইফ পাওয়ারটেক নামের একটি কোম্পানিকে দেওয়া আড়াই কোটি টাকা ঋণ। পরে গ্রাহকের ঋণ ৪ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয় তারই মৌখিক নির্দেশনায়।
এ ছাড়া গুলশান শাখা থেকে ইউনাইটেড ব্রিকস ও ফুলতলা ফিলিং স্টেশনের ঋণ প্রস্তাব জমা দেওয়ার আগেই গত বছরের ১০ মার্চ নির্বাহী কমিটির সভায় আট কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়। এরপর ১০ মার্চ শাখা থেকে ঋণ আবেদনের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য দেওয়া হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। একই শাখা থেকে আরবান ডিজাইন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ঋণ প্রস্তাব জমা দেওয়ার আগেই ১৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়। চিটাগং ফিশারিজকে ও ১৮ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয় ঋণ প্রস্তাব পাওয়ার আগেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই ফারমার্স ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে আদ-দ্বীন হাসপাতালকে ২০ কোটি, সিয়াম এন্টারপ্রাইজকে চার কোটি, এইচ এম এন্টারপ্রাইজকে সাড়ে চার কোটি, শুভ্র এন্টারপ্রাইজকে সাড়ে আট কোটি, এনআর ট্রেডিংকে তিন কোটি ও পাণ্ডুঘর লিমিটেডকে দেড় কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকটির কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ সব অভিযোগের সত্যতা মেলায় শেষমেষ মাহাবুবুল হক চিশতীকে নির্বাহী কমিটি থেকে অপসারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, “আপনাদের ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতী কর্তৃক বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বিশেষ পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে জনাব চিশতী কর্তৃক নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন না করে এককভাবে ঋণ অনুমোদন, শাখায় প্রস্তাব ছাড়াই ঋণ অনুমোদন, পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া ঋণ অনুমোদন, শাখার নেতিবাচক মতামত সত্ত্বেও ঋণ অনুমোদন ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়। উল্লেখিত অনিয়ম উত্থাপনপূর্বক ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৬ ধারার মোতাবেক তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য গত ৮ মার্চ জনাব চিশতীকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। উক্ত নির্দেশের ভিত্তিতে জনাব চিশতী ২৬ মার্চ ২০১৫ তারিখে জবাব প্রদান করেছেন। জবাবে কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি পরোক্ষভাবে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি অসচেতনতার জন্য সংঘটিত ক্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আন্তরিক ক্ষমাপ্রার্থনা ও ভবিষ্যতে পরিচালনাগত ক্রুটি-বিচ্যুতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। জনাব চিশতীর উক্ত জবাব এবং কার্যকলাপ পর্যালোচনাধীন রয়েছে।”
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতোপূর্বের পরিদর্শনে প্রাপ্ত অনিয়ম ও তার প্রেক্ষিতে জনাব চিশতীর জবাব ও পত্র-পত্রিকায় উত্থাপিত অভিযোগসমূহ পর্যালোচনা এবং পরীক্ষান্তে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্ণিত পরিদর্শনে প্রাপ্ত অনিয়মসমূহ প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিধায় আমানতকারীদের স্বার্থে ও ব্যাংকের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে জনাব চিশতীকে নির্বাহী কমিটিতে বহাল রাখা সমীচীন নয়। এমতাবস্থায়, আপনাদের ব্যাংকের পরিচালক জনাব মাহাবুবুল হক চিশতীকে নির্বাহী কমিটি হতে অব্যাহত প্রদানপূর্বক এই পত্রের তারিখ হতে ১০ দিনের মধ্যে অত্র বিভাগকে অবহিত করার জন্য ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আপনাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হলো।”
এই বিষয়ে ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খান আলমগীর কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।