কোনো বাধাই দেয়নি পুলিশ!
সদ্য সমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাংবাদিকদের বাধা দেয়া বা নাজেহাল করার ঘটনা ঘটেনি বলে শুনানিতে দাবি করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাংবাদিক নির্যাতনের ছবি নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
বুধবার ইসির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (সার্বিক) কাছে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেয়া সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩০টি ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব থাকা পুলিশের এসআই ও সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের ওসি সেই শুনানিতে এ বক্তব্য প্রদান করেন।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহা. আনিছুর রহমান ছাড়াও যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইমস অ্যান্ড অপস) রেজাউল ইসলাম ও ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন সমন্বয় শাখার উপ-সচিব আব্দুল ওদুদকে নিয়ে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে আজকের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহা. আনিছুর রহমান ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন সমন্বয় শাখার উপ-সচিব আব্দুল ওদুদ। যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইমস অ্যান্ড অপস) রেজাউল ইসলাম দায়িত্বে নিয়োজিত থাকায় শুনানিতে উপস্থিত হতে পারেননি।
বুধবার আট জন ওসি ও ১২ জন এসআই শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। তারা লিখিত ও মৌখিকবাবে শুনানিতে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেককে ৪ থেকে ৫ মিনিট করে শুনানিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তদন্ত কমিটিকে দেয়া পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। সাংবাদিকদের কোনো ধরনের বাধা দেয়া হয়নি। সাংবাদিকরা যে অভিযোগ করেছেন সেগুলো তাদের মনগড়া।
এ সময় পুলিশের বাধা দেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি তাদের দেখালে, উল্টো সেগুলো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন কর্মকর্তারা। ওই ছবিগুলো সিটি নির্বাচনের কি না এ বিষয়েও তারা প্রশ্ন তোলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুনানিতে উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশ শুনানিতে সাংবাদিকদের প্রবেশের বাধা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে- ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। তারা কোনো সাংবাদিককে বাধা বা নাহেজাল করেনি। শান্তিপূর্ণভাবেই তারা দায়িত্বপালন করেছে।’
সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে সহিংসতা বা বাধা দেয়ার কোনো লিখিত অভিযোগই থানায় আসেনি বলেও জানান শুনানিতে অংশ নেয়া ওসিরা।
শুনানিতে অংশ নেয়া যাত্রাবাড়ী থানার ওসি অবনী কর্মকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘শুনানিতে কি বলেছি, আর কি বলি নাই এটা আমি আপনাকে কেনো বলবো? আপনি আমার কাছে এটা কেন জানতে চাইবেন? আপনি কে? এ বিষয়ে আমি আপনাকে কেন বলবো?’
পরে এসআই ফিরোজের কাছে শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। অন্য যারা আছেন আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন।’
কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনা ঘটেছে কি না, কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন ছিল, ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে কোনো সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন কি না ও কতোক্ষণ সেখানে ছিলেন, ঘটে থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে তা জানানো হয়েছিল কি না এবং ভোটকেন্দ্র নিয়ে অন্য কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য রয়েছে কি না এই পাঁচটি বিষয়ে শুনানিতে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
শুনানি শেষে তদন্ত কমিটির সদস্য ইসির উপ-সচিব আব্দুল অদুদ বলেন, ‘আজ ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তার শুনানি হয়েছে। কি ধরনের বক্তব্য পেয়েছি বা শুনেছি, এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেই জানা যাবে। দরকার হলে পুলিশ ও সাংবাদিকদের মুখোমুখি শুনানি গ্রহণ করা হবে।’
আগামী ২৪ মে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য শোনা হবে। এছাড়া ২৮ মে শোনা হবে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের বক্তব্যও। এজন্যে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের চিঠি প্রদান করা হবে। এরপর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কমিশন সচিবালয়ে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
২৮ এপ্রিল ভোটের দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের বাধার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ভোটের দিন বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকদের বাধা দিয়ে পুলিশের অনিয়মের বিষয়টি নজরে আসার পরপরই ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের পর্যবেক্ষক নীতিমালা পড়ে শুনিয়ে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ নিশ্চিত করেছি।’
উল্লেখ্য, গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনের সময় বেলা ১১টা পর্যন্ত ৩০টি কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। এমনকি সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিককে পুলিশের মারধরও খেতে হয়। এছাড়া পুলিশের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়, এ সময় পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করে। পুলিশের এ সংক্রান্ত ঘটনার সংবাদ ছবিসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়।
তাই বিষয়টি পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে জন্য ঘটনার কারণ উদঘাটন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইসি।