‘হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে’
বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছিলেন; সে কারণে প্রায় ২ মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে এনামুল হক বিজয়। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ছিলেন না তিনি। যদিও ভারতের বিপক্ষে প্রাথমিক স্কোয়াডে রয়েছেন বিজয়। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করবে বলেই মনে করছেন জাতীয় দলের এই ব্যাটিং ওপেনার। এ ছাড়া দলে সুযোগ পাওয়ামাত্রই তা কাজে লাগাতে চান তিনি। বৃহস্পতিবার আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন এনামুল হক বিজয়।
বিশ্বকাপে ভারতের সঙ্গে হেরে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। এর পর দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয়। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে দলের পারফরম্যান্স কেমন হবে বলে আশা করছেন- এ প্রশ্নের উত্তরে এনামুল হক জানালেন, ‘অবশ্যই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। মিরপুরের উইকেটে প্রচুর রান হবে। আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব সিরিজটি নিজেদের পক্ষে রাখার।’
কাঁধের ইনজুরির ধকল কাটিয়ে গত ২১ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ব্যাটিং করতে নেমেছেন এনামুল হক বিজয়। আর প্রত্যাবর্তনের ম্যাচেই দ্যুতি ছড়িয়েছে তার ব্যাট। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) লংগার ভার্সনের প্রথম দিনেই অনবদ্য ৯৪ রান করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এই ওপেনার। এখন পর্যন্ত বিসিএলের ২ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ২ হাফসেঞ্চুরিতে বিজয় সংগ্রহ করেছেন ২৮৮ রান। তৃতীয় রাউন্ড শুরু হওয়ার আগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বিজয়। ২৪ মে বিসিএলের তৃতীয় রাউন্ড খেলতে মাঠে নামবেন তিনি। যদিও ৫ মার্চ বিশ্বকাপের খেলায় স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ফিল্ডিং করতে নেমে ডান কাঁধে আঘাত পাওয়ার পর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি বিজয়ের। তাই তো আসন্ন ভারত সিরিজে আশায় বুক বেঁধেছেন; তিনি বলেছেন, ‘আমি অপেক্ষায় আছি ভাল একটি সিরিজ খেলার। দীর্ঘ ২ মাস আমি গ্যাপে পড়ে গেছি। তবে মাঝে বিসিএল খেলেছি। এ ছাড়া ফিটনেসের জন্য যা যা দরকার তার সবকিছু আমি করেছি। ভারত সিরিজে সুযোগ পেলে ভাল ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব।’
ইনজুরিতে বাদ পড়ায় পাকিস্তান সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিং ওপেন করার দায়িত্ব পড়েছিল সৌম্য সরকারের ওপর। সেই দায়িত্ব খুব ভালভাবেই পালন করেছেন সৌম্য। সেক্ষেত্রে বিজয়ের ফেরাটা কি কঠিন হচ্ছে? কিন্তু না। এমনটা ভাবছেন না তিনি। বিজয় বলেছেন, ‘এটা কোনো চাপ নয়। আমার মধ্যে নেতিবাচক কিছু আসে না কখনই। এ ছাড়া প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সামনেই চ্যালেঞ্জ থাকে সব সময়। বাংলাদেশ এখন পরিণত একটি দল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন আগের অবস্থায় নেই; খুব ভাল অবস্থানে আছে। সবার মধ্যেই কঠিন প্রতিযোগিতা চলছে। সবাই চিন্তা করছে ভাল পারফরম্যান্স করতে হবে; ভাল খেলে নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করতে হবে। আমি মনে করি, আমার জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমি সব সময় এমন একটা বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই। বাংলাদেশের জার্সিতে খেলাটা অনেক গর্বের, বেশি আনন্দদায়ক। সুযোগ এলে সেটাকে আমি কাজে লাগাতে চাই। আমি যে সব হার্ডওয়ার্কগুলো করেছি তার প্রতিফলন অবশ্যই আমি পাব।’
ভারতীয় দল ঘোষণার আগেই দল নিয়ে নানা গল্প আলোচনায় ছিল; এই যেমন ভারতীয়রা ভাল দল বাংলাদেশে পাঠাবে না। শেষ অবধি অবশ্য সেরা দলই পাঠাচ্ছে ভারত। দল নিয়ে বলতে গিয়ে বিজয় বলেছেন, ‘সত্য কথা বলতে, তাদের দল নিয়ে আমাদের চিন্তা করার সময় নেই। আমরা আমাদের দল নিয়ে এখন ব্যস্ত। আমরা নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক চিন্তিত। আমরা চিন্তা করছি কীভাবে আরও ভাল পারফরম্যান্স করা যায়।’
দল নিয়ে না ভাবলেও আলাদা আলাদাভাবে ভারতীয় প্রত্যেক ক্রিকেটারকে নিয়ে বিশ্লেষণ করার পরিকল্পনা আছে বলে জানালেন বিজয়। তিনি বলেছেন, ‘পরিকল্পনা তো সবগুলো খেলোয়াড়কে নিয়েই থাকে। কার বিপক্ষে কীভাবে বোলিং করতে হবে কিংবা কোন বোলারের বিপক্ষে কীভাবে ব্যাটিং করতে হবে; এ সব তো পরিকল্পনার মধ্যে থাকেই। আমি মনে করি, ওদের বিপক্ষে আমাদের ভাল পরিকল্পনা করা অনেক জরুরী। শতভাগ পারফরম্যান্স দিয়ে আমরা ম্যাচ জেতার চেষ্টা করব।’
বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সমর্থকরা মনে করনে এই ম্যাচে আইসিসি কারচুপি করে ভারতকে জিতিয়ে দিয়েছে। তাই তো বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট মানে এখন ভিন্ন কিছু। বিজয়ও এমনটাই মনে করছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জানতাম বিশ্বকাপের পর ভারতের বিপক্ষে কোনো ম্যাচ কিংবা সিরিজ এলে আলাদা একটা দ্বৈরথ সৃষ্টি হবে। আলাদা উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। আমি মনে করি, এটা প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্য ভাল সুযোগ, যদি সে পারফরম্যান্স করতে পারে। আমাদের সবার জন্য এটা বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ ভারতের মতো দল আমাদের দেশে আসছে। ভাল খেলতে পারলে দলের র্যাংকিংও বাড়াবে, সঙ্গে নিজেদের ফোকাসটাও বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।’
আগামী ২৪ মে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) তৃতীয় রাউন্ড মাঠে গড়াবে। এনামুল হক বিজয় প্রাইম সাউথ জোনের হয়ে মাঠে নামবেন। এরই মধ্যে ভাল ইনিংসও খেলেছেন তিনি। টেস্টে ফেরার আশা এখনই করছেন না বিজয়। তবে যখনই টেস্টে ফিরবেন তখন পারফেক্ট টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেই দলে ফিরতে চান। এ বিষয়ে তিনি লেছেন, ‘বর্তমান পারফরম্যান্স হিসেবে হয়তো দলে সুযোগ পেতে পারি। আমি মনে করি, আমি যেহেতু টেস্ট ক্রিকেটে সফল হইনি। সেক্ষেত্রে নিজেকে পরিপূর্ণ টেস্ট ক্রিকেটার বানাতে চাই। আমি সব সময় ফিল করি, টেস্টে যখনই কামব্যাক করব, যেন পরিণত ক্রিকেটার হিসেবে ফিরতে পারি। পারফেক্ট টেস্ট ব্যাটসম্যান হতে চাই। চাই বড় বড় ইনিংস খেলতে।’
নিজের ব্যক্তিগত লক্ষ্য নিয়ে বলতে গিয়ে বিজয় বলেছেন, ‘সুযোগ পেলে অবশ্যই চেষ্টা করব দলকে জেতানোর জন্য ভূমিকা রাখার। দলের সফলতার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারলেই বড় খেলোয়াড় হওয়া সম্ভব। আমি এটাই করতে চাই। বড় চিন্তা করি। ছোটবেলা থেকেই বড় বড় স্বপ্ন দেখি। বড় বড় চিন্তা করি। ভারত অনেক শক্তিশালী দল। ওদের বিপক্ষে পারফরম্যান্স করতে পারলে ফোকাস অনেক বাড়বে। সব মিলিয়ে চেষ্টা করব শতভাগ দেওয়ার।’