মানবপাচার করে বিকাশে টাকা নিয়েছেন ‘সরকারি কর্মকর্তা’!
পরিবারকে না জানিয়েই বিদেশে পাড়ি জমাতে বাড়ি ছাড়েন হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর বড়কুল ইউনিয়নের ঝাকনী পাটোয়ারী বাড়ির লুৎফুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান জসিম (২৭) ও ফারুক হোসেন পাটোয়ারীর ছেলে আল-আমীন (২০)।
সম্পর্কে দু’জন চাচাত ভাই।
নিখোঁজের পর চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ একটি ফোন পান স্বজনরা। দেশের বাইরের নম্বর থেকে ফোন পেয়ে তারা জানতে পারেন মালয়েশিয়ার মানবপাচার চক্রের কাছে জিম্মি রয়েছেন দুই যুবক।
এ ঘটনায় ১০ মার্চ হাজীগঞ্জ থানায় মামলা করেন তাদের চাচা আবুল বাশার।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মিজান ও আল-আমীন গত ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন। পরে বহু খোঁজাখুঁজির পর কোনো সন্ধান মেলেনি। মার্চের প্রথম সপ্তাহে মালয়েশিয়া থেকে ০০৬০১৬৪৮২২৯৮৫ নম্বরে তাদের চাচা আবু তাহের পাটোয়ারীকে ফোন করে দুই যুবকের জন্য মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে একটি বিকাশ নম্বরও দেয় চক্রের সদস্যরা। পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট চাওয়া হয়।
এ্যাকাউন্ট নম্বর ৩৩২৬৬
মালয়েশিয়া থেকে গত ৭ মার্চ মামলার আসামী মো. আল-আমিন ইসলামের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের পটিয়া শাখার ইসলামী ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বরটি ৩৩২৬৬। এ্যাকাউন্ট হোল্ডার আল-আমিন ইসলামের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বদরপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল মান্নান খান। তিনি চট্টগ্রাম আদালতে একটি বিশেষ শাখায় চাকরিরত।
থানা সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক এ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে পটিয়া শাখায় যোগাযোগ করে ওই আল-আমিন ইসলামকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তিনি ঊর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তা হওয়ায় মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তবে মামলাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিআইডির সহযোগিতা নিয়ে ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহের কাজ চলছে।
মা, টাকা দেন; আমারে বাঁচান
ঝাকনী পাটোয়ারী বাড়ির নিখোঁজ যুবক মিজান ও আল-আমীন চাচাত ভাই। মিজানের মা ও স্ত্রীসহ এক সন্তান রয়েছে। তিনি কৃষিকাজ করতেন। আল-আমীন সবেমাত্র এইচএসসি পাস করেছেন। অনার্সে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
মিজানুর রহমানের মা রৌশন আরা জানান, তার ছেলেকে ওরা (মানবপাচারকারীরা) মারধর করে। মোবাইলে তিনি শুধু ছেলের কান্নার আওয়াজ পান। ছেলে তাকে বলেছে, ‘মা, টাকা দেন, আমারে বাঁচান।’
তিনি আরও জানান, মানবপাচারকারীরা প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা চায়। পরে দু’জনের জন্য দেড় লাখ টাকা করে মোট তিন লাখ টাকা চেয়েছে।
আল-আমীনের মা সালেহা বেগম জানান, মামলা করার পর এখন আর ফোন করছে না মানবপাচারকারীরা। তাদের ওই নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।
সিআইডিতে স্থানান্তরের পরই মামলা নিষ্ক্রিয়
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান, দুই যুবক পাচারের মামলাটি পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মামলার বাদী আবুল বাশারের অভিযোগ, সিআইডিতে মামলাটি স্থানান্তর হওয়ার পরই তা আরও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
এদিকে, জেলায় বিভিন্ন মামলার সূত্র ধরে মানবপাচার চক্রের ১৭ জনের তালিকা করেছে পুলিশ।