এক ছাদের নিচে মিলবে সব সরকারি সেবা
ইউনিয়ন থেকে বিভাগ পর্যন্ত সব অফিস একই সীমানার মধ্যে একই ভবনে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ১২ তলা সরকারি ভবনকে দৃষ্টান্ত ধরে এগোচ্ছে সরকার। ভবনটিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অফিস রয়েছে। একইভাবে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারের সব সংস্থার অফিস স্থাপনের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে অল্প জমিতেই সরকারের সব ধরনের অফিস স্থাপন হওয়ায় জমির অপব্যবহার কমবে। একই সঙ্গে সহজেই অফিসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা সম্ভব হবে।
এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমকে সভাপতি করে ‘উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে সরকারি অফিসগুলো একই ভবনে নির্মাণবিষয়ক আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির বৈঠকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় পর্যায়েও একইভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করে এক ভবনেই সরকারের বিভিন্ন অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘আমাদের ছোট দেশে বিশাল জনগোষ্ঠী। এই বিশাল জনসংখ্যার দাপ্তরিক, আবাসিকসহ নানাবিধ চাহিদার কারণে জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। তাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে ভূমির অপব্যবহার রোধ করা, অল্প সময়ে জনগণকে বিভিন্ন সেবা প্রদান ও সরকারি অফিসগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও ঢাকায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একই ভবনের মধ্যে সরকারের সব অফিস স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শফিউল আলম জানান, এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারের অনেক সংস্থা জানে না যে অফিসের জায়গা চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা যায় এবং পাওয়া যায়। সরকারের এমন অনেক অফিস রয়েছে, যাদের নিজস্ব কোনো অফিস ভবন নেই। ভাড়া ভবনে কার্যক্রম চলছে। সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ১২ তলা সরকারি ভবনের মতো করে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একই ভবনের নিচে সরকারি অফিসগুলো স্থাপন করা যায়। আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারের ভূমি অফিস, সড়ক ভবন, পূর্ত ভবন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস, রাজস্বসংক্রান্ত অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস, কৃষি অফিসসহ বিভিন্ন অফিস একই ভবনে থাকবে। তবে হাসপাতাল, আদালত, পুলিশ লাইনস, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ক্যান্টনমেন্ট, আনসার ব্যাটালিয়ন, বিজিবি, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আলাদা অফিস থাকবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারের প্রায় ২৭ ধরনের অফিস রয়েছে, যার বেশির ভাগই এক ভবনের আওতায় আসবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এক ছাদের নিচে জনগণের সব সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল ও একই বছরের ১৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা এবং প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে দেওয়া অনুশাসনগুলোতেও একই সিদ্ধান্ত প্রতিফলিত হয়েছে। এর ভিত্তিতেই মন্ত্রণালয়গুলো এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারের কোন কোন দপ্তর একই ছাদের নিচে নিয়ে আসা যায় এবং কোন কোন সংস্থার কোথায় কোথায় অফিস লাগবে তা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়ে জেলা প্রশাসকদের কাছে পত্র পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইতিমধ্যে ৩৫টি জেলা থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বাকিগুলোর তথ্য পাঠাতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোন কোন অফিসের কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় নিজস্ব ভবন বা জমি দরকার, তারা আগামী এক মাসের মধ্যে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চাহিদাপত্র ভূমি মন্ত্রণালয়কে দেবে।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ