যতো না রূপ, তারও বেশি আলোকিত…

photo by sazzad 11ioo163 copy_0প্রিয়তি। মিস আয়ারল্যান্ড। জেনে খুব অবাক হবেন, বাংলাদেশি এই কন্যা বিশ্বজয় করতে চলেছেন নিভৃতেই। মিস আয়ারল্যান্ড খেতাব জয়ের পর এখন তার স্বপ্ন, মিস আর্থ হবেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের হয়ে আসছে অক্টোবরেই মিস আর্থ প্রতিযোগিতায় লড়বেন।

বাংলাদেশি এই কন্যার এমন বিশ্বজয়ের গল্প শুনে অবাক লাগছে তো?

বুঝুন, প্রিয়তির কাছে কেমন লাগছিলো, যখন তার মাথায় তুলে দেয়া হল মিস আয়ারল্যান্ডের মুকুট। প্রিয়তির ভাষায়, ‘সময়টা আমার খুব একঘেঁয়ে যাচ্ছিলো। ক্লাস, পড়াশোনা, জব সবমিলিয়ে আমি খুব হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। আমি ওই ধরণের বিনোদন পছন্দ করতাম না যে, বাইরে যাচ্ছি, খাচ্ছি, ফুর্তি করে বেড়াচ্ছি। একটু চ্যাঞ্জ চাচ্ছিলাম। মডেলিং সবসময়ই আমার শখের একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু ছিলো। এটা ছাড়া আমার আর কিছু নাই। আমি খুব লাভ করি এটা । তাই এমন কিছু চাচ্ছিলাম যেটা আমার লাইফে একটা বড় চ্যাঞ্জ নিয়ে আসবে। ছন্দটা ফিরে পাবো। হঠাৎ ২০১৩ সালের জুনে পেপারে বিজ্ঞাপন দেখলাম বিউটি কন্টেস্ট এর। এর মধ্যে আমার একটা ক্যাটাগরি ছিলো। সাহস করে ছবি আর রেজিস্ট্রেশন ফিসহ পাঠিয়ে দিলাম। সপ্তাহখানেক পরেই ফিরতি চিঠিতে জানতে পারলাম আমি সিলেক্ট হয়েছি। তারপরই শুরু হলো ধাক্কা। অনেক প্রেশার ছিলো।’

Dp9uGuI
সে ধাক্কায় চারহাজার সুন্দরীকে পেছনে ফেলে সাতশ সুন্দরীর সঙ্গে লড়ে একাই যখন দাঁড়ালেন ক্রাউন নিতে, তার মনে হচ্ছিলো পুরো পৃথিবীটাই আমার। সত্যিই তো! পৃথিবী তখন এক বাঙালী কন্যার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলো। ইতিহাসেও এশিয়ান কোন মেয়ের ইউরোপের এত বড় মুকুট মাথায় নেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম!

জানা গেলো, দেশের জন্য যে এতবড় নাম বয়ে আনলো তার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও আয়াল্যান্ডের বাংলাদেশের দূতাবাস নুন্যতম সংবর্ধনা কিংবা অভিনন্দন বার্তাও পাঠায়নি তাকে। এটা নিয়ে যদিও আক্ষেপ নেই প্রিয়তির।

মুকুট জয়ের আনন্দেই যে তিনি আত্মহারা!

এরপরের গল্পটা অন্যরকম। মিস আয়ারল্যান্ড হিসেবে প্রিয়তি শুরু করলেন মানুষের জন্য কাজ। নানা ধরণের স্বেচ্ছাসেবী কাজে নিজেকে জড়ালেন। অতিতে কোন মিস আয়াল্যান্ডই তার মতো এমন মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। এমন প্রশংসা তাকে হরহামেশাই শুনতে হয়। দেশ থেকে গিয়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে এইভাবে অন্য একটা দেশের মানুষের কাছাকাছি যাওয়া তাদের কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত করা; জানতে চাইলাম তার অনুভূতি। প্রিয়তি জানালেন, ‘আমি মানুষের জন্য কাজ করছি। কোন দেশের তা কখনোই ফ্যাক্ট মনে হয়নি আমার কাছে। শুধু আয়ারল্যান্ড না, আমি আফ্রিকার মানুষের জন্যও কাজ করেছি। অনেক চ্যারিটি ওয়ার্ক করছি। দেশ থেকে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কার জন্য করছি তা মুখ্য না আমার কাছে, কি করছি তাই মুখ্য।’Z5Xz51T
তাই বলে যে দেশের প্রতি কোন দায় তিনি অনুভব করেন নি তাও নয়। দেশে ফিরে তিনি অংশ নিয়েছেন সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটি বেদে ছেলেমেয়েদের জন্য নৌকায় ভাসমান শিক্ষা কেন্দ্র এবং জেলে শিশুদের জন্যও বিনা বেতনের শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা করছে। আর এসব শিক্ষা কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন প্রিয়তি।
দেশে আসছেন মাঝে মাঝেই। এ দফায় এসেছেন বাংলা নববর্ষ উদযাপনে। প্রিয়তির দুই সন্তান। তিনি সিঙ্গেল মাম। তাদের নিয়েই এসেছেন পহেলা বৈশাখের বাঙালী উৎসব দেখাতে।

সে সূত্রেই তার সঙ্গে দেখা। জানতে চাইলাম, মিডিয়ায় তার ব্যস্ততা নিয়ে। জানালেন, ‘আয়ারল্যান্ডে একটা ফিচার ফিল্মে অভিনয় করেছি আমি। এ বছরই ওটা মুক্তি পাবে। কিয়েরান ডেভিস পরিচালিত ‘দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ড’ নামের চলচ্চিত্রটিতে প্রিন্সেস এর ভূমিকায় দেখা যাবে। এছাড়া আরো দুটি মুভির অফার এসেছে। কিন্তু আমি এখনো কনফার্ম করিনি। কেননা সামনের অক্টোবরে মিস আর্থ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমি জ্যামাইকা যাচ্ছি। সময় খুবই কম। নিজেকে প্রস্তুত করার ব্যাপার আছে। এছাড়া পেশায় যেহেতু আমি একজন পাইলট। সেহেতু আমার সময় স্বল্পতাও আছে। এজন্য ভিজুয়াল মিডিয়ায় অতো ব্যস্ত হচ্ছি না। ’S7JnKlS
কিন্তু বাংলাদেশ? বাংলাদেশের পর্দায় কি প্রিয়তিকে দেখা যাবে না? প্রিয়তি জানালেন, বাংলাদেশের কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। কোন নির্মাতার নজরে আসেন নি প্রিয়তি। প্রিয়তির এ নিয়ে কোন আক্ষেপও নেই। তার ধারণা তাকে দূরের নক্ষত্র ভেবে কেউ হয়তো কাছে ভিড়ছেন না। কিন্তু প্রিয়তির ইচ্ছা আছে অভিনয়ের। তবে যেন তেন কিছু নয়। ভালো নির্মাতা, ভালো স্ক্রিপ্ট ভালো নির্মাণের নিশ্চয়তা পেলেই দেশের পর্দায় মুখ দেখাবেন তিনি।

নিজের রূপে বিশ্বয়জয়ের স্বপ্ন বুকে নিয়ে এবার দেশ ছেড়ে উড়ে যাচ্ছেন আয়ারল্যান্ডে, সাহস বুকে নিয়ে তার!

যতো না রূপ যত তারও বেশি আলোকিত তিনি…

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com