বিশিষ্ট ১০ জনকে হত্যার হুমকি : বিষয়টি শঙ্কার, চিঠি থেকেই ক্লু খুঁজছে পুলিশ
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাবির জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অসীম সরকার, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সংসদ সদস্য তারানা হালিম, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ ১০ জনকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ‘আলকায়েদা-এ. বাংলা টিম:১৩’ নামে একটি সংগঠন।
পুলিশ ও বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, এ. বাংলা টিম হল— আনসারুল্লাহ বাংলাটিম।
বুধবার সকালে ঢাবি উপাচার্য ও জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষকে ডাকযোগে পাঠানো ইংরেজি ভাষায় লেখা চিঠির মাধ্যমে এই হুমকি দেওয়া হয়।
হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানোর দু’দিন পার হয়ে গেলেও তদন্তের তেমন কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি পুলিশ। হত্যার হুমকি লিখে পাঠানো চিঠিটিই তাদের কাছে এখন পর্যন্ত একমাত্র ক্লু।
চিঠির মাধ্যমে এ ধরনের হত্যার হুমকিতে শঙ্কিত, উদ্বিগ্ন ও বিস্মিত ওই বিশিষ্ট ১০ নাগরিক। এদের মধ্যে অনেকেই ধারণা করতে পারছেন না কেন তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হল। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের ওপরই নির্ভর করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হুমকিদাতাদের খুঁজে বের করবেন— এমনই প্রত্যাশা তাদের।
হত্যার হুমকির চিঠি পাওয়ার পর এ ব্যাপারে শাহবাগ থানায় অসীম সরকারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-১০৯৮) করা হয়েছে।
এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিয়ার রহমান বলেন, ‘যে খামে হত্যার হুমকির চিঠিটি পাঠানো হয়েছে সেটি পুরো সাদা। খামে ঢাকা জিপিওর সিল এবং দুই টাকার দুটি টিকিট লাগানো ছিল। সাদা কাগজে ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে বিশিষ্ট ১০ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে লেখা হয়েছে মাস্ট ইউ উইল প্রিপেয়ার ফর ডেড।’
হত্যার হুমকি দেওয়া চিঠিতে ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী ১০ বিশিষ্টজনের নাম লেখা ছিল। তাদের সকলের পাশে বিভিন্ন ধরনের উপাধিও দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নাম সর্বপ্রথম লেখা ছিল। তার নামের পাশে লেখা এন্টি ইসলাম.এ্যাডভাইজার। দ্বিতীয়তে নাম রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের। তার নামের পাশে লেখা আই.দুসমন.ভিসি। তৃতীয় স্থানে যার নাম তিনি হলেন সংসদ সদস্য তারানা হালিম। তার নামের পাশে নাস্তিক লেখা রয়েছে। চতুর্থ নামটি হল ঢাবির জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অসীম সরকার, যার নামের পাশে লেখা হিন্দু মৌলবাদী। তালিকায় পঞ্চম স্থানে গণজাগরণ মঞ্চের (একাংশ) মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের নাম রয়েছে। তার নামের পাশে লেখা ব্লগার। ষষ্ঠ অবস্থানে নাম রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েনের। তার নামের পাশে লেখা আই,এনিমিডিইউ। এর পর নাম রয়েছে বিকাশ সাহা, পাশে লেখা আই.দুসমন। ইকবালুর রহিম, পাশে লেখা আই.এনিমি এবং পলটন সুতার, পাশে লেখা এন্টি বাং.র.এডভ। তবে চিঠিতে সর্বশেষ নাম ছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ ও তড়িৎযন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. জাফর ইকবালের। তার নামের পাশে লেখা সে.লার।
চিঠির লেখা বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যাদের নামের পাশে সংক্ষেপে আই লেখা রয়েছে, এর পুরো অর্থ হল ইসলাম। উদাহরণস্বরূপ- আই.দুসমন.ভিসি অর্থাৎ ইসলামের শত্রু উপাচার্য অথবা আই,এনিমিডিইউ অর্থাৎ ইসলামের শত্রু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা আই.দুসমন অর্থাৎ ইসলামের শত্রু। এ ছাড়াও এন্টি বাং.র.এডভ অর্থাৎ বাংলাদেশবিরোধী র. (ভারতীয় রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এর উপদেষ্টা। তবে ড. জাফর ইকবালের নামের পাশে লেখা সে.লার এর অর্থ এখনো জানা যায়নি।
ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘চিঠিতে ১০ জনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যারা এ ধরনের কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।’
ঢাবির জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অসীম সরকার জানান, চিঠিতে তিনিসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। সবাইকেই হত্যা হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করেন। তাকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় তিনি বিস্মিত।
তিনি বলেন, ‘আমি শঙ্কিত। হত্যার চিঠিতে আমাকে হিন্দু মৌলবাদী আখ্যায়িত করে লাল কালিতে চিহ্নিত করা হয়েছে। হত্যার হুমকির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানিয়েছি।’
অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘আজ যাদের হুমকি দিয়েছে, তাদের হয়তো এখন নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কিন্তু যেসব মুক্তমনা লেখক-ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে তাদের বিচার আগে হওয়া উচিত। কারণ ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হলে উগ্রবাদীরা এতটা বেপরোয়া হতো না। এ বিষয়টি দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শফিয়ার রহমান বলেন, তদন্তের অগ্রগতির জন্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। হত্যার চিঠি থেকেই ক্লু নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ডাকযোগে পাঠানো হলেও চিঠিটি কে পাঠিয়েছে তা এখন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়নি।