চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণ; মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গারো তরুণী
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় মাইক্রোবাসে গণধর্ষণের শিকার হওয়া গারো তরুণী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ওই তরুণীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস বেগম রবিবার দুপুরে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ধর্ষণের শিকার হওয়া গারো তরুণীর এরই মধ্যে ডিএনএসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। কিন্তু তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তবে পরিবারের সদস্যরা চাইলে তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। রবিবার দুপুরে ওসিসি থেকে তাকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেওয়া হযেছে বলে জানিয়েছেন বিলকিস বেগম। বর্তমানে তরুণী সেখানেই রয়েছেন। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসমা আক্তার লিলি বলেন, ‘ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন। আমরা তাকে মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ এদিকে ধর্ষকদের ধরতে বিভিন্ন কৌশলে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে এখনই সেই কৌশলের কথা বলছে না তারা। তবে ভিকটিমের বলা নামের সূত্র ধরে পুলিশ এগোচ্ছে। ধর্ষণকারীদের মধ্যে তুষার নামে এক যুবক ছিল বলে ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ভাটারা থানার পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা যমুনা ফিউচার পার্কসহ আশপাশের এলাকা থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো ভিকটিমকে দেখানো হবে। আশা করছি, ভিকটিম অপরাধীদের চিনতে পারবেন। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অপরাধীদের ধরতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। এখন সেগুলো বলব না। সফল হলে আপনারা জানতে পারবেন।’ এদিকে আদিবাসী তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় একজন গ্রেফতার হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুন্সী। রবিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক শেষে টিপু মুন্সী বলেন, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তাররা প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পান। তবে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেতে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী জানান, মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ যুবক কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার রাস্তা থেকে ওই গারো তরুণীকে তুলে নিয়ে চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণ করে। পরদিন শুক্রবার ওই তরুণী নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করে ভাটারা থানায় মামলা করেন। শুক্রবার ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তাপস কুমার ওঝা বলেন, ‘ওই তরুণী যমুনা ফিউচার পার্কের একটি শপিংমলে চাকরি করেন। ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার জন্য বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় পাঁচ যুবক তার মুখ চেপে ধরে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে গাড়িতেই ধর্ষণ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরার জসীমউদদীন রোডের মাথায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।’ পুলিশ জানায়, আদিবাসী ওই তরুণীকে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ভাটারা থানা থেকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়।