জাতিসংঘ প্রতিনিধির বয়ানে নারীর উপর আইএস’র যৌন সন্ত্রাস ও ধর্ষণ
শিরোশ্ছেদ থেকে শুরু করে পুড়িয়ে মারা পর্যন্ত নানা কায়দায় মানুষের উপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর দাবি করে আসছে সশস্ত্র সুন্নিপন্থী সংগঠন ‘আইএস’।
তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নারীরাও। আর তার প্রমাণ মিলেছে আইএস এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা নারীদের বক্তব্য থেকে। আইএস’র কাছ থেকে পালিয়ে আসা নারীদের বেশিরভাগই জানান তারা যৌন সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। আইএস এর বন্দিশালা থেকে পালিয়ে আসা নারীরা জানায় ধর্ষণ থেকে শুরু করে তাদের নানা রকম শারীরিক সহিংসতার শিকার হতে হয়েছিল। সম্প্রতি সিরিয়া এবং ইরাকের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর জাতিসংঘের যৌন সহিংসতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি জৈনব বাঙ্গুরা এসব কথা জানান।
আইএস-এর খপ্পরে পড়ার পর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া এবং আইএস এর যৌন সন্ত্রাসের শিকার অনেক নারীর সাক্ষাতকার নেন বাঙ্গুরা। তিনি বলেন, “আইএস এর আদর্শই হচ্ছে নারীদের উপর যৌন সন্ত্রাস চালানো। তারা এই সহিংসতার রীতিকেই প্রতিষ্ঠিত করছে।”
কুমারী মেয়েদের নিয়ে গিয়ে কিভাবে আইএস সদস্যরা তাদের উপর নির্যাতন চালায় সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বাঙ্গুরা। তিনি জানান, কোনো গ্রাম আক্রমণের পর আইএস সদস্যরা গ্রামবাসীকে বেশ কয়েকটি দলে ভাগ করে। নারী-পুরুষকে তাদের বয়সভেদে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। এসময় কমবয়সী নারীদের কুমারিত্ব পরীক্ষা করা হয়। তাদের দৈহিক সৌন্দর্য পরিমাপ করা হয়। আর এভাবে ‘সুন্দর’ নারী চিহ্নিত করে রাকায় আইএস এর ঘাঁটিতে পাঠানো হয়।
কারা কোন মেয়েকে নিতে পারবেন তার মাঝেও একটি ক্রমধারা বিদ্যমান। শেখ বা রাজারা সবচেয়ে সুন্দর নারীদেরকে বেছে নিতে পারেন। এরপর সুযোগ পান আমিররা। তারপর সৈন্যরা নিজেদের পছন্দমতো নারীদের জিম্মায় নিয়ে যান। তারা প্রায়শই প্রত্যেকেই তিন-চারজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে যান এবং প্রায় এক মাস তাদের সঙ্গে রাখেন। এরপর নারীটিকে ছেড়ে দেয়া হলে আবারো তাকে বাজারে নিলামে তোলা হয়। নিলামে এসব মেয়েদেরকে নিয়ে ক্রেতারা খুব বাজেভাবে দরদাম করেন। অপেক্ষাকৃত ‘অসুন্দর’ নারীদের দাম অনেক কম উঠে।
বাঙ্গুরা এমন এক নারীর সন্ধান পান যাকে ২২ বার নিলামে তোলা হয়েছিল। সে একজন শেখ-এর কাছে থেকে পালিয়ে এসেছিল। শেখ মেয়েটির হাতের পেছনে নিজের নাম লিখেছিল যেন প্রমাণ থাকে মেয়েটি তারই সম্পত্তি।
ধারণা করা হচ্ছে, আইএস-এর কাছে প্রায় ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার নারী বন্দী আছে। আইএস এর অধিকাংশ সদস্যই ইয়াজিদি গোত্রের। ইয়াজিদি গোত্রের সদস্যদের শয়তানের পূজারী হিসেবে আখ্যায়িত করে বাঙ্গুরা জানিয়েছেন তারাই নারীদের উপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চালায়।
তিনি বলেন, তারা নারীদের ধর্ষণ করে, যৌন দাসত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য করে, পতিতাবৃত্তি বেছে নিতে বাধ্য করা ছাড়াও অনেক প্রকার যৌন সন্ত্রাস চালায়। আমরা এমনও শুনেছি যৌনক্রিয়ায় অংশ নিতে রাজি না হওয়ায় ২০ বছরের এক নারীকে জীবিত পুরিয়ে মেরেছে আইএস সদস্যরা। আমরা আসলে এমন অপরাধীর মানসিকতা নিয়ে চিন্তা করছি।”
শতাধিক ইয়াজিদি নারীরা বন্দীশালা থেকে পালিয়ে এসেছে। কেউ লুকিয়ে, কেউবা পরিবারের দেয়া মুক্তিপণের মাধ্যমে। তবে তারা সকলেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
বাঙ্গুরা বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমার জন্য সত্যিই অনেক দুর্বিষহ ছিল। আমি বসনিয়া, কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া, আফ্রিকাসহ অনেক দেশে কাজ করেছি। কিন্তু এমন ভয়াবহ অবস্থা আমি কোথাও দেখিনি। আমি বুঝতেই পারি না মানুষ এতটা নৃশংস কী করে হয়।’
জাতিসংঘের এ প্রতিনিধি জানান, এ মুহূর্তে পালিয়ে আসা এসব নারীকে সাহায্য করার মতো ক্ষমতা জাতিসংঘ কিংবা আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের নেই। এসকল নারীদের নতুন করে জীবন শুরু করতে পারাই হবে আইএস এর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক বড় বিজয়।