মানবপাচারকারী ‘হঠাৎ ধনীদের’ খুঁজছে গোয়েন্দারা
মানবপাচার করে ‘হঠাৎ ধনী’ হওয়াদের খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। গত ১২ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবপাচার রোধ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় ও আন্তঃসংস্থা কমিটির ৮০তম সভায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে এ সব তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুসারে এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে।
মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে শত শত বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছেন। না খেয়ে সাগরেই মারা গেছেন অনেকে। মানবপাচার করে হঠাৎ ধনী হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজতে তাই কক্সবাজার এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে মানবপাচারের অন্যতম রুট কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন সংলগ্ন সমুদ্র এলাকা। টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও শাহপুরী থেকে এলিফ্যান্ট পয়েন্ট পর্যন্তু প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল এলাকা পর্যন্ত মানবপাচার রোধে সরকার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় হঠাৎ করেই ধনী হওয়াদের আয়ের উৎস কী সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এলাকার নতুন ধনী ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারেও গুরুত্বও দেওয়া হবে।’
বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার লোকদের আয়ের উৎস সম্পর্কে আমাদের আগে থেকেই তথ্য রয়েছে। তাই হঠাৎ ধনী হওয়ারা মানবপাচার ছাড়াও বেআইনী নানা অপরাধে জড়িত বলে তথ্য রয়েছে।’
‘বর্তমান সময়ে এ এলাকার অনেকেই মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তাদের মধ্যে স্বল্প সময়ে কারা ধনী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করার কাজ চলছে।’— যোগ করেন বিজিবি প্রধান।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, কক্সবাজার এলাকায় মানবপাচারকে কেন্দ্র করে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। মানবপাচার চক্র এ সব সন্ত্রাসী বাহিনীকে ব্যবহার করেই এই কাজ পরিচালনা করছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সম্প্রতি মানবপাচারকারী দলগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। এ সব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ধলু হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, জাফর আলম, জাফর মাঝি ও বেলাল হোসেন। এদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও উন্নত ও আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তথ্য আদান-প্রদান ও সর্বমহলের সহযোগিতার মাধ্যমে মানবপাচার প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১২-২০১৪ প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ছাড়া মানবপাচার প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৫-২০১৭-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে যা শিগগিরই প্রকাশিত হবে।
বাড়ছে অভিযান : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মানবপাচার সংক্রান্ত কার্যক্রমের বিষয়ে দেওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে ১২ মে ২০১৫ পর্যন্ত মানবপাচার ও অনুপ্রবেশ রোধে সর্বমোট ৭ হাজার ৩৯২টি অভিযান পরিচালনা করেছে কোস্টগার্ড। এ সময় অবৈধভাবে সমুদ্রপথে বিদেশ যাবার সময় মোট ২২৩ জনকে আটক করা হয়।
মানবপাচার প্রতিরোধে গত পয়লা জানুয়ারি থেকে ১০ মে পর্যন্ত সাতটি অভিযান চালিয়ে মোট ২১ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সংক্রান্ত চারটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ২০১৪ সালে র্যাব ২৬ জন মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে।
এ ছাড়াও কক্সবাজার জেলা পুলিশ মানবপাচার প্রতিরোধে গত পয়লা জানুয়ারি থেকে ১৩ মে ১৫ পর্যন্ত ৬৬ জন পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে। অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী ৩৫৮ জনকে পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজার পুলিশ গত ১৩ মে হতে ১৮ মে পর্যন্ত মোট ৬ জন মানবপাচারকারী গ্রেফতার করেছে এবং ১৪৫ জন ভিকটিম উদ্ধার করে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৮২৩ জনকে পাচারকারীর হাত থেকে উদ্ধার করেছে বিজিবি ও একজন পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় ২৫১টি মামলা দায়ের হয়েছে।