খালেদার দুর্নীতির দুই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ১৮ জুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধ করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৮ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।
ঢাকার বকশীবাজার এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার সোমবার এ দিন ধার্য করেন।
মামলার হাজিরা দিতে সোমবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হন।
খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশের আগেই সোমবার সকালে মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। পরে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে খালেদা জিয়া এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন।
সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। আদালত বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে জেরা করার জন্য তার আইনজীবীদের বলেন। আইনজীবীরা বলেন- আমরা বার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় জেরা করার জন্য প্রস্তুত নই। জেরা করার জন্য আমাদের সময় দেওয়া হোক। অপর দিকে আমাদের একটি আবেদন রয়েছে, তা শুনার জন্য আদালকে অনুরোধ করছি।
আবেদনে খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও জয়নুল আবেদীন মেজবাহ উল্লেখ করেন, এর আগে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বাদী দুদকের উপ-পরিচালক যে সাক্ষী দিয়েছেন তা আইনুয়ায়ী হয়নি। তাই সাক্ষীর গৃহীত সাক্ষী বাতিল করে নতুন করে সাক্ষ্য নেওয়া হোক।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, খালেদার অনুপস্থিতে যে সাক্ষী নেওয়া হয়েছে তা অবৈধ। এ ধরনের সাক্ষী আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়।
মাহবুব বলেন, আইনানুযায়ী কোনো আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য নেওয়া হলে তার জামিন বাতিল করতে হয়, অথবা তাকে অনুপস্থিত দেখাতে হয়। আদালত দুইটার কোনোটি করেননি। তাই খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে বাদীর যে সাক্ষ নেওয়া হয়েছে তা বাতিল করে নতুন করে সাক্ষ নেওয়া হোক।
অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে বলেন, আদালত বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে তার অনুপস্থিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনি। আইনানুযায়ী মামলার বাদী যে সাক্ষ দিয়েছেন তা বৈধ।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আবু আহম্মেদ জমাদার সাক্ষী বাতিলের আবেদনটি নামঞ্জুর করেন।
আবেদন বাতিলের পর খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, আমরা সাক্ষী বাতিল চেয়ে যে আবেদনটি করেছি আপনি তা নামঞ্জুর করেছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাব। তাই সাক্ষী মুলতবী রেখে সময় দেওয়া হোক।
আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার জন্য ১৮ জুন দিন ধার্য করেন।
মামলার তারিখ নির্ধারণ হওয়ার পর দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে খালেদা জিয়া বাসার উদ্দেশ্যে আদালত ত্যাগ করেন।
এ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া চারবার বিশেষ জজ আদালতে হাজিরা দিতে উপস্থিত হন। ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর ও ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল তিনি বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়েছিলেন।
এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় তার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাকে জামিন দেন।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুবেদ রায়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অপরদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।