এদেশে নারী মাত্রই কি পুরুষের “বাপের সম্পত্তি” ?
মেঘলীনা: আপনারা মানেন আর নাই মানেন, আমার কাছে তো ব্যাপারটা তেমনই মনে হয়। এই দেশে নারী মানেই কি পুরুষের বাপের সম্পত্তি!! ইচ্ছা হলো তুলে নিয়ে গেলাম, তুলে নিয়ে রেপ করলাম। রেপ করলাম তো করলাম, ইচ্ছা হলো তো মেরেও ফেললাম। ছোট্ট শিশুদের যোনি যেমন আজকাল আকর্ষণীয় পুরুষ মহলে খুব, তেমনই মায়ের বয়সী নারীও তাদের চোখে ভোগ পণ্যই। সব শ্রেণীর সকল বয়সের নারী আজকাল এই দেশের সকল পুরুষের বাপের সম্পতি। ক্লাস ওয়ানের শিশু থেকে শুরু করে গারো তরুণী, দুই বাচ্চার মা থেকে শুরু করে মাটি কাটা শ্রমিক- সকলেই পুরুষদের সম্পতি। এই দেশের পুরুষের অশান্ত পুরুষাঙ্গ শান্ত করার একটা মাধ্যম।
ফেসবুকের কথাই ধরা যায়। এই দেশের পুরুষেরা ফেসবুকে যত নোংরামি করে, আর কোথাও তেমনটা করে কিনা আমার জানা নেই। ইনবক্সে অসংখ্য মেসেজ আছে, যেগুলো এই নোংরামির উদাহরণ। একটা প্রোফাইল পিকচারে নারীমুখ দেখেই অ্যাড রিকোয়েস্ট আর মেসেজ পাঠানো… যে মেসেজে আজব আজব সব কথা লেখা, “তুমি” সম্বোধন করা, “কী করছো, আসো চ্যাট করি” কিংবা তুমি কত “সোন্দর” টাইপের আজাইরা সব মেসেজ। বিষয়টা পুরাই তাজ্জব আমার কাছে!!! মানুষ এত ফালতু হয়? এত ফালতু এই দেশের পুরুষেরা? (না, আমি ফেক আইডির কথা বলছি না। আসল লুল পুরুষদের কথা বলছি।)
কাউকে একটা মেসেজ পাঠানোর সময় কি এই দেশের পুরুষেরা তাঁর প্রোফাইল চেক করে না? নাকি তাঁরা ধরেই নেয় যে এই দেশে নারী মানেই অকম্মা আর বেকার, তাঁরা সেজেগুজে ফেসবুকে বসে থাকে পুরুষ মানুষদের অর্থহীন ইনবক্সের জবাব দেয়ার জন্য আর তাঁরা ফেসবুকে বসে যা করে সবই এইসব পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য।
বিশ্বাস হচ্ছে না? আজ সকালের অভিজ্ঞতা বলি। জনৈক লুল পুরুষ কিছু আগে অনবরত মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে আমাকে, যদিও আমার ফ্রেন্স লিস্টে নেই। এর চৌদ্দ পুরুষের কাউকেও চিনি না। মেসেজ গুলো অনেকটা এইরকম-
tomi ki korso?
aso na chat kori
hei, fb te aso? aso chat kori… ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি…
আমি জবাব না দিয়ে লোকটার আইডিতে গেলাম। বড়ই সৌন্দর্য সব ছবি। জুম্মার নামাজ পড়ে জায়নামাজ হাতে সেলফি তুলেছে!!! (শয়তানির একটা সীমা থাকা দরকার) কোথায় যেন ভাষণ দিতে দিয়েছে, পরনে প্যান্ট শার্ট, কিন্তু মাথায় টুপি। টাইম লাইন ভরা নানান রকমের জ্ঞানের কথা শেয়ার দেয়া। অতি সজ্জন ভদ্রলোকের মত চেহারা। ফেসবুক টাইম লাইনও অত্যন্ত ভদ্রস্থ।
অন্যদিকে আমার ইনবক্সে মেসেজ এসেই যাচ্ছে , “জবাব দাও না কেন, কী করো” টাইপ। এই মর্কটকে কে অধিকার দিয়েছে আমাকে তুমি বলার? টাইম লাইনে এত বড় বড় করে যে বিবাহিত লেখা আছে, সেটা সে চোখে দেখে না? যাই হোক, আমি জবাব দিলাম-
-কী করছি? আপনাকে ব্লক করার জন্য রেডি হচ্ছি। এই মেসেজ পাঠিয়েই ব্লক দিব। ভালো হয়ে যান, আদার অয়াইজ কোনদিন জুতার বাড়ি খাবেন পাবলিকের হাতে।
সেই মুরাদ টাকলা রিপ্লাই দিল-
kota bolba na to fb te asco ken?
(অর্থ-কথা বলবা না তো ফেসবুকে আসছ কেন?)
মানে কি এই কথার? ফ্রেন্ড লিস্টের বাইরের একটা মেয়েও একটা অচেনা আহাম্মকের সাথে কথা বলতে বাধ্য? মেয়েরা ফেসবুক শুধু কি মাথা মোটা বেকুবের সাথে কথা বলার জন্য ব্যবহার করে? নারী মাত্রই পুরুষের সম্পতি? চাহিবা মাত্র তাদের সাথে কথা বলতে হবে, তাদের গালি শুনতে হবে, তাদের বিছানায় যেতে হবে, তাদের দ্বারা রেপড হতে হবে, তাদের কথায় উঠতে বসতে হবে… বিষয়টা কি এই দেশে শেষমেশ এই রকম দাঁড়িয়ে গেছে? ২ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত আমরা সবাই কি শেষমেষ এখানে গিয়েই ঠেকেছি?
ভালো কথা, কয়েকদিন আগে নিউজে দেখলাম এই দেশেরই কোন এক বঙ্গ সন্তান জনৈকা গরুকে ধর্ষণ করেছে! ব্রাভো হে বঙ্গ পুরুষ, ব্রাভো! বেচারি গরু তো জানে না, এই দেশের পুরুষদের স্ত্রী লিঙ্গের প্রাণী হলেই চলে। সেটা মানুষ না গরু, তাতে কিছু যায় আসে না। শিশু না বৃদ্ধা, তাতেও কিছু যায় আসে না। বেচারি গরু পর্দা করে নাই, শরীর দেখিয়ে মাঠে ঘাটে ঘুরেছে। এতে যদি একজন বঙ্গ সন্তানের যৌন আকাঙ্ক্ষা জেগেই যায়, তাতে বঙ্গ সন্তানের কী দোষ?
সব দোষ ওই গরুর! চরিত্রহীনা, বেহায়া, বেপর্দা গরু!!