গ্রামে অপহরণ চক্র, মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত বেসরকারী ভার্সিটি শিক্ষার্থী
এবার অপহরণে জড়িয়ে পড়েছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় র্যাব সদস্যরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ ছাত্র-ছাত্রীকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় বিদেশ ফেরতসহ গাজীপুর থেকে অপহৃত দু’ যুবককে উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রযুক্তির অপব্যবহার করে শিক্ষিত তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে সাইবার অপরাধে। সন্ত্রাসী পরিচয়ে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, কোন কোন ক্ষেত্রে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে তারা। এসব কাজে ইন্টারনেট ফোন ব্যবহারের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের শনাক্ত করতে পারছে না। কখনও এরা আশ্রয় নিচ্ছে প্রতারণার। সোমবার রাতে র্যাবের অভিযানে গাজীপুর থেকে দুই অপহৃতকে উদ্ধারসহ অপহরণকারী চক্রের সদস্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় শিক্ষার্থী গ্রেফতারের পর বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্টরা রীতিমতো বেকায়দায়। অনেক সময়ই প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে প্রায়ই নানা ধরনের অপরাধ ঘটানো হচ্ছে। আগে বিষয়টি রাজধানী বা শহরকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম পর্যন্ত। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সামাজিক, ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক জীবনসহ পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থায়। নিয়ন্ত্রণহীন এই প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই। প্রযুক্তির এই অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণেরও তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
র্যাব জানায়, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের ফটিক মিয়ার ছেলে মোঃ শিমন মিয়া (২৮) গত ৫ মে সিঙ্গাপুর হতে বাংলাদেশে আসে। সিঙ্গাপুর থেকে সাব্বির নামে কাপাসিয়ার রাওনাটের এক যুবক তার বন্ধু শাহীনকে মোবাইল ফোনে জানায়, শিমনের কাছে সে দুই লাখ টাকা পাবে। পাওনা টাকা না দিয়েই শিমন সিঙ্গাপুরে চলে গেছে। সাব্বির নাকি এই টাকা উদ্ধার করতে শাহীনকে অনুরোধ করেছে। শাহীন এই কাজে তার বান্ধবী সাবরিনা কবির ওরফে মৌমিতার (২০) সহযোগিতা চায়। মৌমিতা শিমন মিয়ার মোবাইলে ফোন করে পূর্ব পরিচিতর ভাব দেখায়। কথাবার্তায় খুব আপন হয়ে যায়। মৌমিতা শিমনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার পূর্বাভাসও দেয়। কথাবার্তায় ভাল লাগায় মৌমিতা শিমনকে দেখা করতে বলে। শিমন তাতে রাজি হয়।
মৌমিতা দেখা করার জন্য শিমনকে গাজীপুর মহানগরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) গেটের সামনে আসতে বলে। এর পরিপ্রক্ষিতে চাচাত ভাই মোঃ সাদ্দামকে (২৪) সঙ্গে নিয়ে সোমবার দুপুরে শিমন মিয়া বারি গেটে যায়। এ সময় ৮/৯ জন যুবক ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণ করে এবং তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে নেয়। পরে যুবকরা র্যাবের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অপহৃত দু’জনের চোখ বেঁধে গাজীপুরের ভাওরাইদ দক্ষিণপাড়া প্রতিবন্ধী নগর এলাকার আকাশমনি বনে নিয়ে যায়। সেখানে তারা অপহৃতদের এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকে। এ সময় অপহরণকারীরা ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে শিমনকে তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। নতুবা অপহৃতদের হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেয় অপহরণকারীরা। এ ঘটনা পাশের আম বাগানে কর্মরত এক মহিলা দেখতে পেয়ে আশপাশের লোকজনকে জানালে তারা স্থানীয় পোড়াবাড়ী র্যাব ক্যাম্পে খবর দেয়। খবর পেয়ে র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত দু’জনকে উদ্ধার করে।
এ সময় ভাওরাইদ দক্ষিণপাড়া প্রতিবন্ধী নগর সড়কের তিন মাথার মোড় থেকে উত্তরা আইইউবিএটি’র ছাত্র গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার রাওনাট গ্রামের শেখ শাহজাহানের ছেলে শেখ শাহিন (২৬), বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার লোহালিয়া গ্রামের মোঃ আজিজুর রহমানের ছেলে মোঃ তারিকুর রহমান (২২), আলফাডাঙ্গা জেলার আবুল বাশার মিয়ার ছেলে মোঃ রকি ওরফে জীবন (২০), টাঙ্গাইলের মধুপুর থানার বীরতারা গ্রামের মোঃ মতিউর রহমানের ছেলে আবু তারেক (২৫), ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার নাগলা বাজার এলাকার কৃষ্ণ চন্দ্র রায়ের ছেলে সঞ্জয় রায় (২৩), সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার বোয়ালিয়া পাগলা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে আল আমিন (২২), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) ছাত্র গাজীপুরের বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা এলাকার শেখ ওলিদুল ইসলামের ছেলে শেখ সাকিব (২৩) এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটি’র ছাত্র গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে মোঃ কাইয়ুমকে (২৪) অপহরণের কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও ৬টি মোবাইলসহ গ্রেফতার করা হয়।
পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরা আইইউবিএটি’র ছাত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট থানার চামামুশরীভুজ গ্রামের হুমায়ুন কবিরের মেয়ে মোছাঃ সাবরিনা কবির ওরফে মৌমিতাকে (২০) উত্তরার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। উত্তরা র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল অতিঃ পুলিশ সুপার মোঃ মহিউল ইসলাম এবং সিনিঃ এডি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা এ অভিযান চালায়।
সৌজন্যে: জনকণ্ঠ