‘কে ফিরিয়ে দেবে আমার যৌবনের ১০ বছর’
‘কী অপরাধ ছিল আমার। বিনা অপরাধে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। আদালত থেকে আজ আমি খালাস পেলাম। কে ফিরিয়ে দেবে আমার যৌবনের ১০ বছর?’
বিস্ফোরক মামলা থেকে বৃহস্পতিবার খালাস পাওয়া টাঙ্গাইলের ফয়সাল আহম্মেদ (২৩) আক্ষেপ করে দ্য রিপোর্টের কাছে এমন মন্তব্য করেন।
২০০৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে ফয়সালকে আটক করে পুলিশ। ঢাকা রেলওয়ে থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’র সদস্য সাজিয়ে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে আদালতের কাছ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে তাকে বাধ্য করে পুলিশ।
ঢাকা জেলার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক সাইফুল ইসলাম বুধবার ফয়সালের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস প্রদান করেন। আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
ফয়সাল বলেন, ‘যে বয়সে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে হেসে-খেলে বেড়ানোর কথা সে বয়সে আমাকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করা হয়। কারাগারে নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হয়, পরিয়ে রাখা হয় ডাণ্ডাবেড়ি। গরীব বলে দেওয়া হয়নি ঠিকমতো খাবার। কিছু বললে চালানো হতো নির্মম অত্যাচার। মুখ বুঝে সকল অত্যাচার সহ্য করে আল্লার কাছে দোয়া করেছি, আর বলেছি, হে আল্লাহ আমাকে এ অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা কর।’
ফয়সাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘এর আগে ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অপর একটি বিস্ফোরক মামলা থেকে আদালত আমাকে অব্যাহতি দেয়। বর্তমানে আমার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। দেশে গরীবের জন্য কোনো আইন নেই।’
ফয়সালের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘ফয়সাল বিনা অপরাধে দশ বছর ধরে কারাগারে আটক রয়েছে। আদালত বৃহস্পতিবার তাকে খালাস দেয়। কোনো সাক্ষী তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ফয়সালের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় তিনি মুক্তি পাচ্ছেন।’
ফয়সালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে বোমার বিস্ফোরণ হয়। ওই ঘটনায় রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মধুসুদন চৌধুরী রেলওয়ে থানায় বিস্ফোরণ আইন মামলাটি দায়ের করেন। ২০০৬ সালের ৫ জানুয়ারি রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।