অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শ্রীবরদীর ১০ ইউনিয়ন প্লাবিত
শ্রীবরদী (শেরপুর)ঃ সংবাদদাতা
টানা কয়েক দিনের অতি বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শ্রীবরদীর ১০ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে ২ সহ¯্রাধিক মৎস্য খামার ও পুকুরের মাছ। ডুবে গেছে আমন ফসল ও সবজির মাঠ।
জানা গেছে, গত রবিবার থেকে টানা বর্ষন ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোমেশ্বরী নদীর বাধ ভেঙ্গে উপজেলার সীমান্তবর্তী সিংগাবরুনা, রাণীশিমুল, কাকিলাকুড়া, তাতিহাটি, গোসাইপুর ইউনিয়ন সহ ১০ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে ২ সহ¯্রাধিক মৎস্য খামার ও পুকুরের প্রায় কোটি টাকার মাছ। পানির নিচে তলিয়ে গেছে আমন ক্ষেত। পানি উঠায় নষ্ট হয়েছে করলা, বেগুন, পটল, মুখি কচু সহ অন্যান্য সবজি। এতে মৎস্যচাষি ও কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। বসতবাড়িতে পানি উঠায় অনেকে বাড়িতে রান্না বন্ধ রয়েছে। অনেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে শিশু সন্তান ও গবাদীপশু নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, রানীশিমুল ইউনিয়নের ভায়াডাঙ্গা টু বালিজুরি পাকা সড়কের হালুয়াহাটি নামক স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ভায়াডাঙ্গা টু ঝিনাইগাতির সড়ক যোগাযোগ। নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে টেংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভায়াডাঙ্গা বাজারে হাটু পানি। একই ইউনিয়নের বিলভরট, হালুয়াহাটি, রাঙ্গাজান, বালিজুরি, বিলভরট, টেংগরপাড়া, চুকচুকি সিংগাবরুনা ইউনিয়নের মোরগিচোরা গ্রামের বসতঘরে পানি উঠেছে। জলবদ্ধতায় পৌর এলাকার রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খামারিয়াপাড়া এলাকায় রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নগুলোরও একই অবস্থা।
বিলভরট গ্রামের ইয়াসমিন, সফুরা, আলেয়া, নূর জামাল জাম্বু জানান, তাদের বসত ঘরে পানি উঠেছে। রান্না বন্ধ। টিউবওয়েল ও পায়খানা ডুবে যাওয়ায় বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে।
হালুয়াহাটি গ্রামের গোলাম মোস্তফা জানান, তার ৩৭ একর জমির ৪ টি মৎস্য খামার পানিতে ভেসে গেছে। সিংগাবরুনা ইউনিয়নের মোরগিচোরা গ্রামের ফর্সার মিয়ার ৬ একর, অজ হাজির ৮ একর, মোতালেব মিয়ার ৭ একর, আলতাফ মিয়ার ৩ একর, ফারুক মিয়ার ৫ একর, দুদু হাজির ১২ একর নিলু মিয়ার ৩ একর জমির মৎস্য খামার তলিয়ে গেছে বলে তারা জানান। সদর ইউনিয়ন, কুড়িকাহনীয়া, ভেলুয়া, কেকেরচর, গড়জরিপা ইউনিয়নের অধিকাংশ মৎস্য খামার ও পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ আমন ও সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে।
শ্রীবরদী পৌর মেয়র মোঃ আঃ হাকিম বলেন, অতি বৃষ্টিতে পৌর এলাকার অনেক রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমার পর এগুলো সংস্কারের উদ্দোগ নেয়া হবে।
রানীশিমুল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু শামা কবির জানান, এ এলাকায় ১৯৮৮ সালের পর এ রকম পানি দেখলো এলাকাবাসী। ভায়াডাঙ্গা বাজার সহ অনেক গ্রামের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় দূর্ভোগে পড়েছে। এছাড়া এলাকার সকল মৎস্য খামার প্লাবিত হওয়ায় বিরাট পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
সিংগাবরুনা ইউনিয়ন চেয়াারম্যান আবু রায়হান বাবুল বলেন, তাঁর জীবনে এরকম বন্যা তিনি দেখেননি। তিনি দূর্ভোগের শিকার লোকজনের সাহায্যের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।
উপজেলা মৎস্য অফিসার দেবযানী ভৌমিক বলেন, তিনি ঢাকা থেকে আজ ফিরলেন। তাই এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিনি জানেন না। আগামীকাল এলাকা পরিদর্শনের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা যাবে।
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি অফিসার এফ.এম মোবারক আলী জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি স্থায়ীভাবে কয়েকদিন থাকলে ফসলের ক্ষতি হবে। আর যদি নেমে যায় তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তাই এ মূহুর্তে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা যাচ্ছে না।
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবা শারমিন ময়মনসিংহে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে থাকায় তার বক্তব্য জানাতে পারেননি