শ্রীবরদীতে চুরির অপবাদে বিচারে লাঠিপেটা অত:পর মৃত্যু ঃ মামলা
শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধিঃ
শ্রীবরদীতে চুরির অপবাদে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে লাঠিপেটার পর যুবকের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সালিশে চেয়ারম্যান কর্তৃক চুরির দায়ে আটক আলম (২১) কে পেটানোর দৃশ্যের মোবাইল ভিডিও চিত্র এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে নিহতের বাবা বাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে শেরপুর আদালতে একটি মামলা করছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নে। অপরদিকে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন ঘটনাটিকে সড়ক দূর্ঘটনা বলে প্রচার করছে।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে পাশ্ববর্তী ঝিনাইগাতি উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আলম (২১) তার নানা বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের ভায়াডাঙ্গা দক্ষিণ পাড়া গ্রাম হতে সকাল দশ এগারটার দিকে পায়ে হেটে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে পাকা রাস্তা থেকে রাণীশিমুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবু শামা কবির ও ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মিল্লাত হোসেন সহ কয়েক জন তাঁকে ধরে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। পরে চুরি করার অপরাধে আলম মিয়াকে চেয়ারম্যান আবু শামা কবির বেদম বেত্রাঘাত করে। খবর পেয়ে আলমের পিতা বাচ্চু মিয়া ইউনিয়ন পরিষদে আসলে চেয়ারম্যান বলে যে চুরের ঘটনায় আটক আলমকে থানায় দেয়া হবে। পরে অপমান করে তাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে তারা আলমকে খুন করে লাশ গুম করার উদ্দ্যেশ্যে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের হাই ওয়েতে ফেলে রাখে। পরদিন ১৪ জুলাই খবর পেয়ে উল্লেখিত স্থানে গিয়ে মৃত আলমের লাশ দেখতে পায়। এ সময় নিহত আলম মিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাড় ভাঙ্গা ও রক্তাক্ত কাটা ও জখমের দাগ ছিল। পরে ফুলপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে সালিশে চেয়ারম্যান আবু শামা কবির আলমকে বেদরক পেটাচ্ছে। দাড়িয়ে আছে ইউপি সদস্য মিল্লাত। সালিশে পেটানো ও এরপর আলমের মৃত্যুর খবরে ভিডিওটি এখন সবার হাতে হাতে।
এদিকে মামলার ১ সপ্তাহ পার হলেও কোন অগ্রগতি না হওয়ায় নিহত আলমের দরিদ্র পরিবার হতাশায় পড়েছে। আলমের বাবা বাচ্চু মিয়া জানান, সালিশে আলমকে পেটানোর পর আমরা আলমকে চাইলে চেয়ারম্যান আমাদেরকে না দিয়ে থানায় দেয়ার কথা বলে আলমকে রেখে দেয়। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘চেয়ারম্যানের হেফাজতে থাকা অবস্থায় আলম ফুলপুরে যায় কেমন করে। চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আলমকে খুন করে লাশ গুম করার উদ্দ্যেশ্যে ফুলপুরে ফেলে আসে।’
এ নিয়ে অভিযুক্ত রাণীশিমুল ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিল্লাত হোসেন জানান, আলমের নামে চুরির অনেক অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে লোকজন আলমকে আটক করে পরিষদে নিয়ে আসে। পরে সামান্য উত্তম মাধ্যম দেয়ার পর আলমের মা তাকে নিয়ে যায়। ঢাকায় চলে যাবে বলে এ সময় তাকে একটি পরিচয় পত্রও দেয়া হয়।
চেয়ারম্যান আবু শামা কবির বলেন, আলম অন্য উপজেলার লোক। তার সঙ্গে আমার কোন শত্রুতা নেই। চুরির ঘটনায় তাকে আটক করার পর ছেড়ে দেয়া হয়। পরে জেনেছি ঢাকায় যাওয়ার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় সে মারা গেছে।
শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ এস.আলম জানান, মামলাটি তিনি এখনও পাননি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।