আরও দাম বাড়ানোর পক্ষে কমিটি
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় এর দাম কিছুটা কমানো যেত বলে মনে করে কমিটি।
গতকাল রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। সংসদ ভবনে কমিটির এই বৈঠক হয়।
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী উল্লেখ করে চলমান প্রতিবাদ ও সমালোচনার মধ্যে সংসদীয় কমিটি এমন মত দিল।
তাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ৬ টাকা ৬৮ পয়সা, সরকার বিক্রি করে ৪ টাকা ৭১ পয়সা দরে। প্রতি ইউনিট জলবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১ টাকা ৭৫ পয়সা। অন্যদিকে ডিজেলচালিত কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিটে ২০ থেকে ৩৫ টাকা। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। এটি অযৌক্তিক নয়। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় এ দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম অনেক কম।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত বৃহস্পতিবার গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে এ দাম কার্যকর হবে।
বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানো উচিত—সংসদীয় কমিটির এই মত সম্পর্কে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি অযৌক্তিক। সরকার বলছে, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে অনায়াসে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেক কমে গেছে। কিন্তু সরকার সেখানে লাভ করছে। এর নেতিবাচক প্রভাব এসে পড়ছে বিদ্যুতের ওপর।
ম. তামিম আরও বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো যৌক্তিক। কারণ এ দেশে এক কথায় বিনা মূল্যে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে, যে কারণে অপচয় বেশি। সরকার এটি করে রাজনৈতিক কারণে। কিন্তু এভাবে বেশি দিন চালানো যাবে না। গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করতে হবে।
গতকালের ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, দেশে ২২টি বিদ্যুৎ-কেন্দ্রের বয়স ২৫ থেকে ৫০ বছর। যথাসময়ে সংস্কার না করায় এসব কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচও অস্বাভাবিক বেশি। বর্তমানে এসব কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ৯৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। কমিটি এসব কেন্দ্র সংস্কার করে উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসানের পরিমাণ ২৯ হাজার কোটি টাকা।
তাজুল ইসলাম বলেন, অতীতে বিপিসি বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনে কম দামে বিক্রি করায় তাদের দায় বেড়ে গেছে। এখন বেশি
দামে বিক্রি করে দায়মুক্ত হতে পারলে সেটা রাষ্ট্রের লাভ হবে। লোকসান কমাতে হলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হবে। লোকসানি প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের জন্য ভালো নয়। আয় ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। অবিরাম ভর্তুকি দিলে একসময় রাষ্ট্রের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। তবু মানুষের দাবি, জ্বালানি তেলের দাম কমানো হোক। সে জন্যই কমিটি মনে করে, দাম কিছুটা কমানো যেত।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যা কমেছে, সেটা অস্বাভাবিক। এই দর কত দিন স্থায়ী হয়, সেটা নিয়ে সংশয় আছে। সে জন্যই হয়তো বিপিসি দাম কমাতে চায় না।
তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এম আবদুল লতিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শিবলী সাদিক ও নাসিমা ফেরদৌসী অংশ নেন।