বাবুলের বিরুদ্ধে এনবিআরের জিডি তদন্তের নির্দেশ
যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বাবুল ও দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ সংবাদদাতা হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বৃহস্পতিবার রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. আলী হোসেন সাধারণ ডায়েরিটি তদন্তের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তদন্ত কর্মকর্তাকে ৭ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দশ দেন।
এর আগে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (বোর্ড প্রশাসন-১) এ এইচ এম আবদুল করিম রমনা থানায় তাদের বিরুদ্ধে জিডি করেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এনবিআরের বিশেষ বোর্ড সভায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বাবুলের মালিকানাধীন দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অমার্জিত, শিষ্টাচার বিবর্জিত, মানহানিকর, বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য-সম্বলিত ধারাবাহিক প্রতিশোধপরায়ণমূলক প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় উপস্থিত সদস্যরা মতামত দেন যে, পত্রিকাটির এমন কার্যক্রম এনবিআর তথা সরকারের সার্বিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যর্থ করার লক্ষ্যে একটি সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত ও দূরভিসন্ধিমূলক কৌশল, যা প্রতিহত করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যখন উন্নততর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় সকল প্রকার দুর্নীতি, হয়রানি, অসদাচরণ ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছে তখন এ পত্রিকাটি ও যমুনা গ্রুপের মালিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে এনবিআর তথা সরকারকে ব্যর্থ করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।
দূরভিসন্ধিমূলকভাবে ’দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২৯ অক্টোবর, ০১ নভেম্বর, ১৮ নভেম্বর, ২৪ নভেম্বর, ৩০ নভেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর ধারাবাহিকভাবে ৭টি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রকাশিত সংবাদগুলোর বিষয়বস্তু মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও কল্পনাপ্রসূত।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, মাঠপর্যায় থেকে যমুনা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানারকম জালিয়াতি, অনিয়ম, সরকারের টাকা না দিয়ে আদালতে মামলা করে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি করা, মামলার নথি লুকিয়ে রাখাসহ নানাপ্রকার অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের ২৫৮ কোটি টাকার মামলা রয়েছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে।
যমুনা গ্রুপের সহযোগী বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান জারা এক্সেসরিজ ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৪ সালে ১২ ডিসেম্বর তাদের রফতানির প্রমাণ হিসেবে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের প্যাডে ১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার একটি প্রসিড রিয়েলাইজেশন সার্টিফিকেট (পিআরসি) দাখিল করে, যা তদন্তে ভুয়া প্রমাণিত হয়।
এই গ্রুপের অপর সহযোগী বন্ডেড প্রতিষ্ঠান এমকাবা ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে কমার্স ব্যাংকের নামাঙ্কিত প্যাডে ৩১ কোটি ৫৪ লাখ জাল পিআরসি দাখিল করে। যাচাইকালে কমার্স ব্যাংক পিআরসি জালিয়াতির বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করে। পুনরায় প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ হতে পিআরসি দাখিল করেন, যা তদন্তাধীন আছে। জাল পিআরসি দাখিলের কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
যমুনা গ্রুপের আরেকটি সহযোগী বন্ডেড প্রতিষ্ঠান হংকং গার্মেন্টসের বিরুদ্ধে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণের কারণে ৭ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকার দাবিনামার কারণে বন্ড লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
ঢাকা কাস্টম হাউসে উচ্চতর আদালতের রায়ে যমুনা গ্রুপের মালিকানাধীন যমুনা টেলিভিশনের ৩ কোটি ৭৪ লাখ ১৯ হাজার টাকার ব্যাংক গ্যারান্টির নগদায়ন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে যমুনা গ্রুপের ২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২ কোটি ৯৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকার দাবিনামা আদায়ের তাৎক্ষণিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
২০০৩ সালের দু’টি রিট মামলায় (৩০২৭/০৩ ও ৩০২৮/০৩) জড়িত সরকারের ১৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৮ হাজার টাকাসহ অন্যান্য মামলার টাকা আদায়ের জন্য সম্প্রতি এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া সকল সুপারসিড মামলার রাজস্ব আদায়েরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ দু’টি মামলায় সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত হলে ১৯৯৮ সাল থেকে সুদসহ যমুনা গ্রুপকে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ সব জালিয়াতি উদ্ঘাটন ও সরকারি দাবির টাকা আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করায় যমুনা গ্রুপের মালিক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এবং এর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মনোবল ধ্বংস করে দেওয়াসহ এনবিআরের চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে চলেছে।