পৌর নিবার্চন : প্রচারণায় নামবেন খালেদা, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
আসন্ন পৌর নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় নামার পরিকল্পনা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তার শারীরিক সুস্থতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকে মাঠের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৫টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ১৩ ডিসেম্বর নাম প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৪ ডিসেম্বর। এরপরই প্রতীক নিয়ে প্রচারণা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। দলের প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারলেও, পারছেন না শেখ হাসিনা। নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী পৌর নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়া প্রচারণা নামবেন কী-না এমন প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, ‘এ নিবার্চন যেহেতু গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার রক্ষায় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি, সেহেতু ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নামার সম্ভাবনা আছে।’
নিরাপত্তার বিষয়ে নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কী জানাতে চাইলে তিনি বলেন,‘সিটি নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর সময় ম্যাডাম পরপর তিনবার সরকারী দলের সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন। ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা এ হামলা করে। এটা রাজনৈতিক বর্বরতা ছাড়া কিছুই না। এবারের প্রচারণার ক্ষেত্রে ম্যাডামের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।’
খালেদার জিয়া মাঠে নামবেন, কী নামবেন না এ বিষয়টা দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চুড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘রাতে আমাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে। বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তাছাড়া আগে প্রার্থীরা প্রচারণায় নামুক তার পর ম্যাডামের নামার বিষয়টি আসবে।’
২০ দলীয় জোট শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, ‘আগামী সপ্তাহ থেকে প্রচারণা শুরু হবে। ঢাকার আশপাশ এলাকায় শুরুতে প্রচারণায় নামব। কোন দিনে কোন এলাকায় নামব তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
জোট নেতা খালেদা জিয়া প্রচারণায় নামছেন কী না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখন চূড়ান্ত হয়নি। উনার (খালেদা জিয়া) শারীরিক সুস্থতার ওপরও নির্ভর করছে মাঠে নামার বিষয়টি।’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নিয়ে বৈঠক করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
চলতি বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও তাবিথ আওয়ালের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। সেসময় পরপর তিনবার তার গাড়িবহরে অতর্কিত হামলা চালানো হয়।
এছাড়া রাজধানীর ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘নির্বাচনের নামে মাঠে নামলে জনরোষে পড়বেন খালেদা জিয়া।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, ‘তিনি আবার যদি মাঠে নামেন, তাহলে জনরোষে পড়বেন। জনগণের আবার মনে পড়বে তিনি পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিলেন।’
বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, সিটি নির্বাচনে ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ খালেদার জিয়ার ওপর হামলা চালিয়ে ছিল, এ সব কিছু মাথা রেখে নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ ঢাকার আশাপাশে পৌর নির্বাচনী এলাকায় খালেদা জিয়া নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণায় নামার পরিকল্পনা করছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর তিনি প্রচারণায় মাঠে নামবেন। এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সম্পর্কে জানাতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের কাজ হচ্ছে নিরাপত্তা দেওয়া। সেটা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হোক। নিয়মের মধ্যে যেভাবে হয় আমরা উনাকেও (খালেদা জিয়া) প্রয়োজন হলে নিরাপত্তা দেব।’
এদিকে পৌরসভা নির্বাচনে যথাযথভাবে আচরণবিধি মেনে চলতে বিএনপিসহ ২০ রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজনৈতিক দলসমূহের প্রচার-প্রচারণার সময় দলীয় প্রধান বা নেতৃবৃন্দের কোনো পথসভা যেন জনসভায় রূপ না নেয় বা জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় তা মেনে চলতে হবে।
ইসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির প্রধান হওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে দলের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী বলেন, ‘আচরণবিধিতে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিষয়ে বলা রয়েছে যে তারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শামিল আছেন বলেও আমি জানি। কাজেই তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।’