মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের গড়িমসি
আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করা মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের শিথিলতার অভিযোগ উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমগুলোতে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান বিধিভঙ্গ করে ময়মনসিংহে এক পৌর মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার পর কমিশনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে।
দুই মন্ত্রীর ওই প্রচারণার পর স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে চিঠি দেয়ার পর এখন কমিশনই স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে।
পৌরসভা নির্বাচনের আচরণবিধিতে বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপ, হুইপ, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতাসহ সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।
এ আচরনবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তিন দিন আগেই ঢাকা-২০, বরগুনা-২ ও নাটোর-২ আসনের সাংসদকে বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কারণ দর্শাতে ইসি সচিবালয় থেকেই সরাসরি চিঠি দেওয়া হয়। তিন সাংসদই বুধবার ইসিতে নোটিশের জবাব দিয়ে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেন।
কিন্তু ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান একটি পথসভায় বক্তব্য দেন। সেখানে সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া হয়, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
এই পর্যায়ে এসেই মূলত পিঠটান দিয়েছে কমিশন। বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও) পাঠানো চিঠিতে কমিশন বলেছে, ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভায় ৭ ডিসেম্বর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তা কমিশনকে জানাতে বলা হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ে কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ কমিশনের তুলনায় স্থানীয় পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের অপেক্ষাকৃত কম। কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অর্থ দাঁড়ায় যে তারা মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে চায় না বলে মন্তব্য করে ওই সংবাদমাধ্যমটি। তাদের দাবি এর ফলে মন্ত্রী-সাংসদদের মধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। নির্বাচনী মাঠে এটা সবার জন্য সমান সুযোগের ক্ষেত্র নষ্ট করবে।
একই অভিযোগ করে সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নির্বাচন কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার মন্তব্য ছেপেছে। তাতে তিনি বলেন, ‘ইসি পত্রপত্রিকার নিউজ দেখে সাংসদদের নোটিশ দেয়, আর মন্ত্রীর বিষয়ে নীরব প্রতিষ্ঠানটি। মাঠকর্মকর্তারা এ নিয়ে কী করবেন?’
ইসি এভাবে অন্যের কাঁধে দায়িত্ব চাপালে ভোটের আগামী দিনগুলোতে কী অবস্থা দাঁড়াবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ওই সংবাদমাধ্যমটি।
এবারের নির্বাচনে ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৭৫টিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও)। বাকি পৌরসভার দায়িত্বে আছেন উপসচিব পদমর্যাদার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের ভূমিকা নিয়েও চলছে সমালোচনা।