দিনমজুরের চিকিৎসা হয়নি টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে!
মোহাম্মদ আলী (৪৫) একজন খেটে খাওয়া পরিশ্রমী মানুষ। তিনি গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী বাজারে চালের আড়তে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। অসহায় এই দিনমজুরকে চুরির অপবাদে দিনভর বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে টঙ্গী বাজারের আড়তদার আশিক ও তার সঙ্গীরা। আশিকের নেতৃত্বে একই অপবাদে দিনভর নির্যাতনের স্টিমরোলার চলে আরেক দিনমজুর শফিকুল ইসলামের ওপর। আড়তদার আশিক ওই দুই দিনমজুরকে বেধড়ক পেটানোর এক পর্যায়ে মোহাম্মদ আলীর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে মোহাম্মদ আলী অচেতন হয়ে পড়েন। পরে অচেতন ও রক্তাক্ত ওই দিনমজুরকে আড়তদার এবং তার সহযোগীরা টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। কৌশল করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এন্ট্রি খাতায় মোহাম্মদ আলীর নাম পাল্টে নূর হোসেন লেখা হয়। পরে জরুরি বিভাগ থেকে আড়তদার আশিক ও তার সহযোগীরা সটকে পড়েন।
মোহাম্মদ আলীর অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরার কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম থাকার পরেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেনি। আড়তদারের প্ররোচনায় ওই চিকিৎসক তাকে ঠিকমতো চিকিৎসা না দিয়েই হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। ওইদিন রাতে মোহাম্মদ আলীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে তার পরিবারের লোকজন পুনরায় টঙ্গী সরকারি হাসাপাতালে নিয়ে যায়। এসময় রাতের শিফটে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ডা. মাসুদ রানা। ওই চিকিৎসক মোহাম্মদ আলীর অবস্থা গুরুতর দেখার পরেও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেননি। দ্বিতীয় দফায় আহতের স্বজনদের আকুতি-মিনতিতেও কর্ণপাত করেননি ডা. মাসুদ রানা। উল্টো রোগীকে কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক। অথচ টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল থেকে দেয়া স্লিপে ঢামেকে রেফার্ডের কথা উল্লেখ করেননি ডা. মাসুদ রানা। মোহাম্মদ আলী ওই চিকিৎসককে তার ভর্তি পুলিশ কেইসের ডাইরিভুক্ত করার জন্য আকুতি-মিনতি করেছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই ওই চিকিৎসকের মন গলেনি। বর্তমানে ওই দিনমজুর মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত শনিবার (২৫ নভেম্বর) দিনভর মুমূর্ষু দিনমজুর মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে এভাবেই দুই দফা ‘নাটক’ করেন টঙ্গী সরকারি হাসপাতলের চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে টঙ্গী সরকারি হাসাপাতলে চিকিৎসক ডা. মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘রোগী ভর্তি করার মতো গুরুতর ছিল না। চিকিৎসায় সন্তুষ্ট না হলে রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাক।’
এ ব্যাপারে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পারভেজ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসার নামে হয়রানিসহ হরেক রকম অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়েও ডা. মাসুদ রানা টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। বিগত দিনে এই চিকিৎসকের এসব অনিয়মের ব্যাপারে বেশ কয়েকবার জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। হাসপাতালের কর্মচারীদের মারধর ও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে ডা. মাসুদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক মাসুদ রানা বেশ কয়েকটি প্রাইভেট গার্মেন্টসে মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি করেন বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মঞ্জুরুল হক বলেন, রোগীদের প্রতি ডাক্তারদের অবহেলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। ডা. মাসুদ রানার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।