পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ: ফাঁসি থেকে বাঁচলেন ১২ জন
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তর পিলখানায় সৈনিকদের বিদ্রোহের সময় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত। বিচারিক আদালত যে ১৫২ জনের সর্বোচ্চ দণ্ড ঘোষণা করেছিল তাদের মধ্যে চার জনকে খালাস এবং আট জনকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর বিচার চলাকালে মারা গেছেন একজন।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেনসহ তিন সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রায় ঘোষণা করে। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
গতকাল রবিবার এ রায় ঘোষণা শুরু হয় উচ্চ আদালতে। শুরুতে দীর্ঘ পর্যাবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। পরে ঘোষণা করা হয় সাজা।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মাথায় ২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদরদপ্তরে বিদ্রোহ করে সৈনিকরা। সেদিন বিডিআরের দরবারের আনুষ্ঠানিকতা ছিল এবং বাহিনীটির অফিসারদের প্রায় সবাই ছিলেন সেখানে। মহাপরিচালক শাকিল আহমেদসহ এদের সবাই সেনাবাহিনী থেকে বিডিআরে ছিলেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণের পর পিলখানা দরবার হলে থাকা ৫৫ অফিসারসহ ৭৪ জনকে হত্যার তথ্য প্রকাশ হয়। তাদেরকে হত্যার পর মাটিচাপা দিয়ে রেখেছিল জওয়ানরা।
এই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ আসামির ফাঁসির রায় দেন ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান। এছাড়াও ১৬০ জনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ২৫৬ জনকে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়। ২৭৭ জনকে বেকসুর খালাসও দেন বিচারক।
আইন অনুযায়ী বিচারিক আদালতের রায় অনুমোদন করতে হয় হাইকোর্টে। এই ডেথ রেফারেন্স শুনানি ও আসামিদের আপিল চলে এস সঙ্গে।
৩৭০ কার্যদিবস শুনানি শেষে গত ১৩ এপ্রিল উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয় মামলাটি।
রবি ও সোমবার দুই দিনে ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখে। খালাস দেয়া হয় ১২ জনকে। এদের মধ্যে আছেন আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী। আর বিচার চলাকালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিণ্টুসহ দুই জন মারা গেছেন।
বিচারিক আদালতে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড পাওয়া ২৫৬ আসামির মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছর, ৮ জনকে সাত বছর, চারজনকে তিন বছর এবং দুই জনকে ১৩ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে উচ্চ আদালত। আর দণ্ডপ্রাপ্ত ২৯ জন খালাস পেয়েছেন।
বিচারিক আদালতে দণ্ড পাওয়া ২৮ জন আপিল করেনি। আর তিন জন বিচার চলাকালে মারা গেছেন।
বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া যে ৬৯ জনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছিল তাদের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন এবং চার জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে উচ্চ আদালত। বাকি ৩৪ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীগণ ও গণমাধ্যমের কর্মীরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।