নৌমন্ত্রীকে নিয়ে স্ট্যাটাস: এবার আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা
চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর নিয়োগ নিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগ এনে মানহানি মামলা দায়েরের পর ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে এবার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোমবার মাদারীপুর থানায় মামলাটি করেন নৌমন্ত্রীর ভাগ্নে সৈয়দ আসাদউজ্জামান মিনার।
মাদারীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান জানান, মাদারীপুর সদরের বাসিন্দা নৌমন্ত্রীর ভাগ্নে সৈয়দ আসাদউজ্জামান মিনার বাদী হয়ে গত ২৩ নভেম্বর থানায় তথ্য-প্রযুক্তি আইনে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এই বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনা চাওয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাক্ষেপে ২৬ নভেম্বর রাতে মামলাটি নথিভুক্ত হয়। এরপর সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবু নাঈমকে মামলাটির তদন্ত ভার দেয়া হয়েছে।
মামলার বাদী নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ভাগিনা সৈয়দ আসাদ উজ্জামান মিনার তার আরজিতে উল্লেখ করেছেন, বিবাদী নজরুল ইসলাম ওরফে আসিফ নজরুল তার ফেসবুক আইডিতে উল্লেখ লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়োগ পরীক্ষায় ৯২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে, যার মধ্যে ৯০ জন নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর এলাকা মাদারীপুরের বাসিন্দা। অথচ উনি চাইলে ৯২ জনই উনার এলাকার লোক হতে পারতো। ২ জন ভিন্ন এলাকার লোক নিয়োগ দিয়ে উনি সততার যে দৃষ্টান্ত দেখালেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
আসিফ নজরুলের স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে হাজার হাজার ফেসবুক আইডি থেকে নৌমন্ত্রী সম্পর্কে বিরূপ পরিহাস, অশ্লীল, অসম্মানজনক মন্তব্য আসতে থাকে। বাদী তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে চট্টগ্রাম বন্দরে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এই তথ্যটি সম্পূর্ণ অসত্য।
এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর নিয়োগ নিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহাজান খানের বিরুদ্ধে ফেসবুক মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগ এনে মাদারীপুর আদালতে ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা হয়। ৫০০ ও ৫০১ ধারায় মামলাটি করেন নৌমন্ত্রীর চাচাতো ভাই মাদারীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ফারুক খান। মাদারীপুর আদালতে দায়েরকৃত মামলা নং ৪০০/২০১৭। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সমন জারি করেছে। মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ ডিসেম্বর।
ওইদিন আসিফ নজরুলকে মাদারীপুর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন। বাদীপক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর আপন ছোট ভাই ওবাইদুর রহমান কালু খান, সহ-সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া হাওলাদার, সদস্য মেসবাহউদ্দিন খোকন, সেহেলা ইয়াসমিন কলি, সাইদুর রহমান সাঈদ ও সালাউদ্দিন খান রাসেল। মামলায় সাক্ষী হিসেবে আছেন মাদারীপুর জেলা পরিষদের চার সদস্য সামচুল আলম নান্নু, অ্যাডভোকেট যতীন সরকার, আ. মান্নান লস্কর ও নুরজাহান পারুল।
এদিকে এই ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করেন যে, চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর পদে নিয়োগকৃত ৯২ জনের মধ্যে আটজন মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে আসিফ নজরুল দাবি করেছেন, যে আইডি থেকে নৌমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে সেটা তার নয়। এটা তিনি চালান না।