ব্রিটেনে বাংলাদেশি কিশোরীর চমক!
১৯৯০ এর দশকে বাবা-মা বাংলাদেশ থেকে আসেন যুক্তরাজ্যে। বাড়িতে সবসময় বলা হয় বাংলা। সবার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলাতেও স্কুল পড়ুয়া মেয়েটির ভয়। অথচ এই মেয়েটিই কিনা ব্রিটেনের নামীদামী সব স্কুলের শিক্ষার্থীদের পিছনে ফেলে জিতে নিয়েছে বিতর্ক প্রতিযোগিতার সেরার পুরস্কার!
সেলিনা বেগম নামের ১৬ বছর বয়সী এই মেয়েটির সাফল্যের খবর জানিয়েছে ডেইলি মেইল। এ লেভেল পড়ুয়া মেয়েটি ইটন কলেজের জাফর হলে অনুষ্ঠিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ফাইনালে উঠে পুরস্কার ছিনিয়ে নেয়।
দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে পিছনে ফেলে ইটন কলেজের শরতকালীন আমন্ত্রিত উন্মুক্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠে যায় সেলিনা। নভেম্বরের শুরুতে অনুষি্ঠত এই প্রতিযোগিতার ছয় ফাইনালিস্টের একজন সে। সেলিনা ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘সবার দৃষ্টি আমার ওপর ছিলো। কথা বলতে গিয়ে মনে হলো আমার গলা কাঁপছে। ভয় পাচ্ছিলাম খুব, কিন্তু বড় করে শ্বাস নিয়ে আমার মতো করে শুরু করলাম। মানুষের চোখ খুঁজে নিয়ে তাদেরকে সম্পৃক্ত করেই আমার যুক্তি তুলে ধরছিলাম।’
বিতর্কের ডায়াসে সেলিনা বেগম। সংগৃহীত ছবি
সেলিনা ওই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন।
‘যখন শেষ করলাম ভাবিনি আবার আমাকে দাঁড়াতে হবে। কেননা এখানে যারা ছিলেন তারা প্রত্যেকেই ছিলেন মেধাবী। যার বক্তৃতা শুনছিলাম মনে হচ্ছিল সেই জিতে যাবে। তারা প্রায় সবাই একরকম ভাবেই বলছিলো,’ বলছিলেন সেলিনা।
সেলিনা বলেন, ‘বিজয়ীদের নাম ঘোষণার সময় আমি হাত তালি দিচ্ছিলাম নিজের নাম বলা হয়েছে খেয়ালিই করিনি। পাশে বসে থাকা এক শিক্ষক ধাক্কা দিয়ে বললেন, তুমিই জিতেছো। আর আমি বললাম ওয়াও।’
আর আজ পূর্ব লন্ডনের নিউহ্যামে যেখানেই সেলিনার কথা উচ্চারিত হচ্ছে সেখানেই বলা হচ্ছে ওয়াও। যুক্তরাজ্যে বাবা-মা ছাড়াও তাদের সঙ্গে বাস করেন, ১৪ বছর বয়সী ছোট ভাই আর দাদী।
লন্ডনের দরিদ্র এলাকায় বাস করা অভিবাসী পরিবারের সেলিনা স্বপ্ন দেখেন অক্সফোর্ড বি্বিবিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়ার। কাজ করতে চান আইনপেশায়।
আরও ছোট বয়সে ভাইয়ের সঙ্গে সেলিনা। সংগৃহীত ছবি
ওয়েস্টমিনিস্টার ও উইনচেস্টারের নামীদামী স্কুলের শিক্ষার্থীদের পেছনে ফেলে জিতে আসা সেলিনা এই বিজয়ের কৃতিত্ব দিতে চান স্কুলের ডিবেটিং সোসাইটির শিক্ষকদের।
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট থেকে আসা বাবা-মায়ের সন্তান সেলিনা। সন্তানদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা ছাড়া তাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সেলিনার মায়ের সময় কাটে তার অসুস্থ বাবার দেখাশোনা করে। লাঠি ছাড়া হাঁটেতে পারেন না তার বাবা।