মৌসুমি ফল কমলালেবু কেন খাবেন নিয়মিত?
প্রায়শ যে ব্যাপারটা দেখা যায়, মজাদার ও সুস্বাদু খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর হয় না। আবার যে খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর সেগুলো মজাদার ও সুস্বাদু হয় না! এই ব্যাপারটির সাথে আরো একটি ব্যাপারেও সকলে একমত হবেন। মৌসুমি ফলগুলো খেতে দারুণ সুস্বাদু ও মজাদার হয় সবসময়। একইসাথে হয় স্বাস্থ্যসম্মত। এমনই একটি দারুণ সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর ফল হলো কমলালেবু।
শীতের সময় আসার শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত দারুণ স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলটি পাওয়া যায় অহরহ। ইতিমধ্যেই সকল বাজারে বিভিন্ন জাতের ও ধরণের কমলালেবু ফলে একদম ভরে গেছে। নিজের বাসার জন্য তো বটেই, কোথাও বেড়াতে গেলেও সাধারণ ও পরিচিত এই ফলটি কেনা হয়ে থাকে সচরাচর। বহুল পরিচিত ও জনপ্রিয় এই ফলটি যে স্বাস্থ্যকর সে বিষয়ে নিশ্চয় কারোর সন্দেহের অবকাশ নেই! কিন্তু ঠিক কী কী স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে এই দারুণ ফলটির তা কি আমরা পুরোপুরি জানি? কমলালেবুর গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে তার মাঝে থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণাগুণ তুলে ধরা হলো।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে
কমলালেবুতে রয়েছে একইসাথে পাঁচনযোগ্য ও অপাঁচনযোগ্য আঁশ, যা পাকস্থলীর ক্রিয়া চালু রাখতে সাহায্য করে। কমলালেবুর আঁশ সমূহ পেটে জমে থাকা মূত্রের সাথে মিশে গিয়ে সেটাকে নরম করতে সাহায্য করে। একই সাথে এটি হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হজম রস তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে। যে কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কমলালেবু অন্যতম ভালো একটি খাদ্য উপাদান।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
কমলালেবুতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম, যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ‘ফ্ল্যাভনোয়েড’ যাকে বলা হয়ে থাকে হ্যাস্পেরিডিন, কমলালেবুতে এই উপাদানটি প্রাকৃতিকভাবেই থাকে। এই উপাদানটি মানব শরীরের রক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রণের মাঝে রাখতে কাজ করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
দারুণ ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি, যা খুবই শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং রোগ প্রতিরোধকারী একটি উপাদান। কমলালেবুতে আরো একটু উপাদান পাওয়া যায়। যাকে বলা হয়ে থাকে ‘লিমোনেন’। এই উপাদানটি ক্যান্সার-প্রতিরোধক উপাদান হিসেবে পরিচিত। আমাদের শরীরে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে না, তখনও এই উপাদানটি কাজ অব্যাহত রাখে। যে কারণে, এটি শরীরের ক্যান্সার কোষগুলোকে শনাক্ত করে তাদের ধ্বংস করে ফেলে। যার ফলে ক্যান্সার শরীরে বাড়তেও পারে না।
হৃদযন্ত্রের সমস্যার বিরুদ্ধে কাজ করে
কমলালেবুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমূহ ফ্রি-রেডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং কোলেস্টেরল এর অক্সিডেশন হওয়া থেকে প্রতিহত করে। অক্সিডাইজড কোলেস্টেরল হৃদযন্ত্রের নালীতে আটকে থাকে। যার ফলে রক্ত চলাচল ব্যহত হয়। যেটা থেকে হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা তৈরি হয়। ফলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস এই সমস্যা দূর করে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে।
ভাইরাল-ইনফেকশন ভালো করে
যেহেতু কমলালেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, এটি খুব দারুণ ও প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধকারী একটি উপাদান। যা মানব শরীরের কাজ করে ইনফেকশন এবং অসুস্থতার বিরুদ্ধে কাজ করে। ফলে থাকা পলিফেনলগুলো অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান। যা শরীরের ভেতরের ক্ষতিকর ভাইরাস মেরে ফেলে যেকোন ধরণের ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে।
রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে
প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে কমলালেবু সুপরিচিত। ফলে থাকা ফ্ল্যাভোনেড সমূহ শরীরের এনজাইমকে কার্যক্ষ্ম করতে সাহায্য করে থাকে। যা শরীরের ভেতরের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়। এছাড়াও, কমলালেবুর আঁশ সমূহ পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে বলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায়।
হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে
কমলালেবুতে শুধুমাত্র ভিটামিন-সি নয়, একইসাথে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ডি। যা শরীরে সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম শোষণ করে এবং শরীরে হাড়কে মজবুত হতে সাহায্য করে। এছাড়াও কমলালেবুতে রয়েছে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। যা ক্যালসিয়ামকে সঠিকভাবে শোষণ করতে সাহায্য করে।
দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে
দাঁতের মাড়ির জন্য কমলালেবু খুবই উপকারী। এটি রক্ত বাহিকা ও কানেক্টিভ টিস্যুকে মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে। একইসাথে দাঁতের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে কমলালেবু। এছাড়াও, ফলে থাকা ভিটামিন-সি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে বলে মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হয় না।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে
নিয়মিত কমলালেবু খাওয়ার ফলে ঘনঘন শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়ার হার কমে যায়। কমলালেবুর প্রদাহ-বিরোধী উপাদান সমূহ শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে। কমলালেবুতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড শ্বাসনালীর অতিরিক্ত অনুভূতিশীলতা কমাতে কাজ করে থাকে।
সূত্র: Boldsky