একজন মানবিক ইউএনও নিলুফা আক্তার
তাসলিম কবির বাবু, স্টাফ রিপোর্টার:
দেশের জনপদে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। ইতিমধ্যে সরকার বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে ব্যস্ত সময় পার করছে উপজেলা প্রশাসন। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো শ্রীবরদীতে জনমনে যখন করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে, তখন কতর্ব্যপরায়ণ ও কর্মদক্ষতায় মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলছেন শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার।
অদম্য মনোবল নিয়ে দৃঢ়তার সাথে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছুঁটে চলেছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। একই সাথে ন্যায়-নিষ্ঠা ও সততার মাধ্যমে অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। করোনায় আতঙ্কিত মানুষকে সচেতন করা, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অসহায়, হতদরিদ্র ও নিন্ম আয়ের মানুষদের খোঁজ নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাঁর এ কর্মদক্ষতার কারণে গোটা শ্রীবরদী উপজেলাতে মানবতাবাদের এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। প্রশাসনিক দক্ষতা, সহনশীল মানবিকতা আর সদাহাস্য আচরণ তাঁর কর্মগুণকে প্রশংসিত করেছে শ্রীবরদী জনপদে। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেও প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকরের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে উপজেলার জনগণকে সচেতন ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছুটে চলছেন এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে বিধি অনুযায়ী আইন অমান্যকারীকে করছেন জরিমানা অথবা দিচ্ছেন সাজা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে পুঁজি করে যখন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের বাজার অস্থিতিশীল করেছে, তখন বাজার নজরদারি করে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীকে করছেন জরিমানা। পাশাপাশি বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে দিয়েছেন কঠোর নির্দেশনা।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে কলকারখানা, গণপরিবহন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় খেঁটে খাওয়া নিন্ম আয়ের মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কাজ না থাকায় অসহায়, হতদরিদ্রদের ঘরের খাবার শেষ হয়ে গেছে। খবর পেলেই খাবার নিয়ে অসহায়, হতদরিদ্রের দরজায় গিয়ে খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছেন শ্রীবরদী ইউএনও নিলুফা আক্তার। আবার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সরকারি ত্রাণের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন।
অপরদিকে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেছে শ্রীবরদী’র ইউএনও’র মোবাইলের মাধ্যমে ত্রাণ সেবা। মানুষকে আসতে হচ্ছে না ত্রাণের জন্য। নেই লম্বা লাইন। কারো কাছে ছুটাছুটি করতে হচ্ছে না। ফোন আসলেই পরিচয় গোপন রেখে ত্রাণের খাদ্যসামগীর প্যাকেট চলে যাচ্ছে মানুষের ঘরে। কথা একটাই করোনা মোকাবেলায় ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন। ঘরে খাবার না থাকলে আমাদেরকে জানান, আমরাই আপনার ঘরে খাবার পৌঁছে দিবো।
এরই ধারাবহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার সীমন্তবর্তী এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সাধারন জনগণের মাঝে সরকারি ত্রাণ সেবা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিফলেট পৌছে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার। আর ইউএনও’র সাথে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) মন্জুর আহসান। ইতিমধ্যে তিনিও সততা, কর্মদক্ষতা ও ন্যায়-নিষ্ঠা দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের মন জয় করেছেন।
সম্প্রতি শ্রীবরদীতে করোনা সংক্রমিত রোগী সনাক্ত হয়। এঘটনায় সাতানী শ্রীবরদী (শান্তিবাগ) মহল্লায় বসবাসরত সংক্রমিত রোগীর বসতঘরের আশেপাশের ২০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়। গত বুধবার লকডাউনকৃত ওই এলাকা থেকে ফোন আসে ইউএনও’র কাছে। সাথে সাথেই ইউএনও নিলুফা আক্তার দ্রুত সমেয় ওই এলাকার কর্মহীন ও ঘরে খাবার নেই এমন পরিবারের মাঝে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। তাৎক্ষনিক খাবার পেয়ে কাঠমিস্ত্রী আশকর মোবাইল ফোনে জানান, আমরা ঘরের বাহিরে যেতে পাচ্ছি না। ঘরে খাবার নেই। মনে পরে ইউএনও স্যারের ফোন দেই। তবে এতো দ্রুত ঘরে খাবার চলে আসবে ধারনাও করিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মহীন কিন্ডার গার্টেন শিক্ষক বলেন, স্কুলের সামান্য নামমাত্র বেতন। চলতো টিউশনি করে। এখন তাও বন্ধ। লজ্জায় হাত পাততেও পারি না। মানবিক ইউএনও স্যারের ফোন কলে ত্রাণ সেবা না পেলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হতো।
ইউএনও নিলুফা আক্তার ছাত্র জীবন থেকেই বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ৩১ তম বিসিএস-এ প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করে। তিনি বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় অত্যন্ত দক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে শ্রীবরদীতে ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর থেকেই সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে উপজেলার বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছেন। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি ২ সন্তানের জননী। তিনি জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলায় এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তারের সাথে তিনি বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে অসহায় হতদরিদ্র মানুষের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। কর্মহীন মানুষের পেটে ক্ষুধা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তায় আতঙ্কিত মানুষগুলোর পেটের ক্ষুধা নিবারণে উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, সম্প্রতি শ্রীবরদীতে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদেরসহ লকডাউনকৃত এলাকায় বসবাসকারীদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে মরণব্যাধী অদৃশ্য এ ভাইরাস মোকাবেলায় জনসচেতনতা তৈরিতে মাঠ পর্যায়ে প্রচারণাসহ অফিসিয়াল ফেইসবুক সাইটে বিভিন্ন প্ররামর্শ চলমান রয়েছে। এ যুদ্ধটা আমাদের সকলের। তাই বাইরে নয়, ঘরে অবস্থান করুন। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কিছুদিন কষ্ট করে নিজের পরিবার এবং দেশের স্বার্থে, মানবিকতার স্বার্থে নিজ ঘরে অবস্থান করুন। তাহলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।