কেমন আছে লকডাউনে হলে থেকে যাওয়া বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা?
মৌমিতা রানী, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৮ ই মার্চ বন্ধ দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাড়ারও নির্দেশ দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। কিছু কারণে হল ছাড়তে দেরি হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও যাওয়ার পথে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়েই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রায় ১৬ জন শিক্ষার্থী। এ ব্যাপারে বশেমুরবিপ্রবি প্রেসক্লাব এর সাথে কথা বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় দিবস হলের ২০৯ নং রুমের এক শিক্ষার্থী খায়রুল। তিনি জানান, ” ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর ভালো উপায় হল যে যেখানে আছে, সেখানেই অবস্থান করা। বাড়ি যাওয়ার পথে যদি সংক্রমিত হই, তাহলে পরিবারের সদস্যরা সংক্রমিত হতে পারে, এমন আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যাই। বিদেশি শিক্ষার্থীরাও তো আছে। এখানে আমি সংক্রমিত হলে হলাম, কিন্তু আমার পরিবারকে তো আমার সেফ করতে হবে।”
এরই মধ্যে ২৬ শে মার্চ থেকে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয় আন্তঃজেলা যাত্রী পরিবহনসেবা। বিজয় দিবস হলে ১০ জনের মত এবং স্বাধীনতা দিবস হলে ৭ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছে বলে জানান খায়রুল। স্বাধীনতা দিবস হলের ৫১৪ নম্বর রুমে থাকা আরেক শিক্ষার্থী মিল্টন জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গাড়ি দিয়ে কিছু দূর পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের অনেকের বাড়ি অনেক দূর।” বাড়ি পর্যন্ত যেতে আরো অনেকবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হবে যেটাতে ঝুঁকি রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
শিক্ষার্থীরা হল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ওয়াইফাই থাকলেও হলে ওয়াইফাই বন্ধ করে ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। একপর্যায়ে হলের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে দেড় মাস তাদের আর কোন খোঁজ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। একজন গার্ড দেওয়া হলেও তার নাম্বার বন্ধ থাকে।” বাজার করতে শিক্ষার্থীরা হল থেকে ঝুঁকি নিয়ে দুইতলা থেকে পাইপ বেয়ে ওঠানামা করে বলে শিক্ষার্থীরা জানায়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে গত ৩০ এপ্রিল ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন গণিত বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী মাহাদী হাসান। তিনি বলেন,”শিক্ষার্থীরা আমার কাছে মোবাইলে তাদের সমস্যাগুলো বলে। তাই আমি বিষয়টা সমাধানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তুলে ধরতেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি।”
অভিযোগগুলোর ব্যাপারে স্বাধীনতা দিবস হলের প্রাধ্যক্ষ জনাব আব্দুর রহমান জানান, “ওয়াইফাই এর কাজ আইসিটি শাখার। যিনি দায়িত্বে আছেন, তাঁর বাড়ি শিবচর। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য স্থানে ওয়াইফাই থাকতেই পারে। কিন্তু হলের কি সমস্যা হয়েছে এটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ই তো বন্ধ, তিনি কিভাবে আসবেন?” গেটবন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, “নিরাপত্তার জন্য সব হলে গেট বন্ধ, ভার্সিটির মেইনগেটও বন্ধ। শেখ রাসেল হলের কাজ অসমাপ্ত। তাই ওখানে কোন গেইটই নাই।
বাজার পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাদের একজন গার্ড দেওয়া হয়েছে।” খোঁজ-খবর নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। নিজেও বাজার করে দিয়েছি আমাদের তহবিল থেকে। সব হলের দায়িত্বও আমার না। তারপরও দুই হলেই খোঁজ নিয়েছি। কিছু সীমাবদ্ধতা তো আমাদেরও আছে।” তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই গার্ডের নাম্বারে কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন সময় কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। তার নাম জনাব নাসির বলে শিক্ষার্থীরা জানায়।
বিজয় দিবস হলের প্রাধ্যক্ষ জনাব শফিকুল ইসলাম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় এখন বন্ধ, লকডাউনের কারনে পরিস্থিতিটা এখন মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। তবে বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে সম্ভবত প্রক্টর স্যার আছে। তাকে আমি বিষয়টা অবহিত করছি। শিক্ষার্থীরাও তাকে জানালে ভালো হবে।” শিক্ষার্থীদের আশা তাদের সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হবে, তাদের খোঁজ-খবর নিবেন।