মাতৃহারা শিশু পরিবারের পাশে শ্রীবরদী অফিসার্স ক্লাব
তাসলিম কবির বাবু, স্টাফ রিপোর্টার:
শেরপুরের শ্রীবরদীতে মাতৃহারা দুই শিশু সানজিদা (৩) ও শান্তা আক্তার (১১) এর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে অফিসার্স ক্লাব। মঙ্গলবার দুপুরে শ্রীবরদী অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে অসহায় পরিবারের দুই শিশুর পিতার কাছে হোটেল ব্যবসার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে দেন অফিসার্স ক্লাবের সদস্যরা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অফিসার্স ক্লাবের সভাপতি নিলুফা আক্তারের উদ্যোগে অফিসার্স ক্লাবের সদস্যরা মাতৃহারা শিশুর পরিবারকে সহযোগিতা করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়ানো ঘটনায় ওই পরিবারের সদস্যরা সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন অফিসার্স ক্লাবের সদস্যদের মানবিক ও দৃষ্টান্তমূলক কাজের প্রশংসা করেন।
জানা যায়, মা হারা শিশু সানজিদা আক্তার (৩) ও শান্তা আক্তার (১১) কে নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন কর্মহীন হোটেল শ্রমিক পিতা শহীদুল ইসলাম। গত জুলাই মাসে করোনার সংক্রমণ রোধে সারাদেশে লকডাউন চলমান থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ে হোটেল শ্রমিক শহীদুল ইসলাম। প্রায় তিন বছর আগে শহীদুল ইসলামের স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এরপর তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে শহীদুল। নিজের বসতভিটায় একটি টিনের ঘর থাকলেও সেটি বসবাসের অনুপযোগি থাকায় কুড়িকাহনিয়া বাজারে কৃষি অফিসের পরিত্যক্ত বিল্ডিং এ দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বসবাস করে শহীদুল। মা না থাকায় বাবা-মা দুইজনেরই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। লকডাউন চলাকালীন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিষয়টি নজরে আসে ইউএনও’র। পরবর্তীতে নিজ উদ্যোগে গত ৮ জুলাই দুপুরে খাদ্য সামগ্রী, নগদ টাকা ও শিশুদের জন্য ঈদের পোশাক নিয়ে হাজির হোন ইউএনও নিলুফা আক্তার।
এ ঘটনাটি জানাজানি হলে শ্রীরবদী উপজেলা প্রশাসনের অফিসারবৃন্দ ওই পরিবারকে সাবলম্বী করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রীবরদী অফিসার্স ক্লাব একটি ফান্ড গঠন করে। ১২ জুলাই সকল অফিসারবৃন্দ উপস্থিতিতে দুই শিশু সন্তানের পিতার মতামতের প্রেক্ষিতে হোটেল ব্যবসার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডিএম শহীদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অফিসার্স ক্লাবের সভাপতি নিলুফা আক্তার, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আতাউর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আলম তালুকদার, অফিসার্স ক্লাবের সাধারন সম্পাদক উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোশারফ হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার, উপজেলা মৎস্য অফিসার সাইদুর রহমান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউর রহমান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নুসরাত জাহান উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ্জহুরা, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ফরহাদ আহমেদ আকন্দ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান, উপজেলা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার আশারাফ ইসলাম প্রমুখ।
অফিসার্স ক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোশারফ হোসেন বলেন, ইউএনও নিলুফা আক্তার স্যারের নেতৃত্বে সকল অফিসারে আন্তরিক সহায়তায় আমরা মাতৃহারা শিশু পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এর আগেও অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে করোনাকালীন সময়ে লকডাউনের সময় ৩ শ অসহায় দু:স্থ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমাদের এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অফিসার্স ক্লাবের সভাপতি নিলুফা আক্তার বলেন, মা হারা অসহায় শিশু পরিবারের জন্য উপজেলার সকল অফিসারদের সহযোগিতায় হোটেল ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন জিনিসপত্র শহীদুল ইসলামের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সকলের আন্তরিক চেষ্টায় এই সহযোগিতা করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সমাজের বৃত্তবানরা অসহায়দের পাশে দাঁড়ালে তাদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে। ভবিষ্যতেও এধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।