নাগলিঙ্গম সুরভি ছড়াচ্ছে উত্তরা গণভবনে
জেলার উত্তরা গণভবনে ফুটেছে দুর্লভ ফুল নাগলিঙ্গম। গাছের কান্ডে রাশি রাশি সুশোভিত সুরভিত ফুল জানান দিচ্ছে নাগলিঙ্গম হচ্ছে ফুলের রাজা। রাজার প্রিয় ফুলের তালিকায় ছিল বসন্ত আর গ্রীস্মের এ ফুল।
উত্তরা গণভবনের রাজপ্রাসাদের সামনে দাঁড়ালে মাদকতা ছড়ানো গন্ধ উৎসুক দর্শনার্থীকে টেনে নিয়ে যাবে এর উৎসে। রাজপ্রাসাদের দক্ষিণে কয়েক গজ এগিয়ে গেলে দেখা মিলবে নাগলিঙ্গমের। প্রায় পঞ্চাশ ফুট উচ্চতার গাছটি যেন আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টায় আছে। এর শাখা-প্রশাখাগুলো ছাতিমের মত বড় সবুজ গুচ্ছ পাতায় আচ্ছাদিত। কিন্তু অবাক করা কান্ড! শাখাতে কোন ফুল নেই। যেন কান্ড ফুঁড়ে ছড়ার মত বের হওয়া মঞ্জুরিতে রাশি রাশি ফুল ফুটে আছে। প্রায় মাটির সমতল থেকে সারা গাছের কান্ড জুড়ে মঞ্জুরি তথা ফুলের বিস্তৃতি।
পুরু ছয়টা পাপড়ি আচ্ছাদনে নজরকাড়া ফুলগুলো খুব সহজেই নজর কাড়ে। ফুলের রঙ নিয়ে হোচট খাওয়ার দশা। কি রঙের ফুল এটি? কমলাও নয় বাদামীও নয়, বরং এ দুয়ের মিশ্রনের পাপড়িগুলোতে আবার বেগুনী রঙের বর্ণচ্ছটা। আর পরাগচক্রে সাদা বেগুনী হলুদের সমাহার। সাপ বা নাগিনীর মত ফণা তোলা পরাগচক্রের কারনেই হয়তো ফুলের নামকরণ-নাগলিঙ্গম। নাগিনীর আমন্ত্রণে অভিসার পিয়াসী নাগ যেমন করে ছুটে আসে, তেমনি যে কোন দর্শনার্থীকে কাছে টানে নাগলিঙ্গম ফুল। মাদকতাময় তীব্র গন্ধে মুখর চারিদিক।
নাগলিঙ্গম ফুলের উপস্থিতি অনেকদিনের। মধ্য মার্চে অর্থাৎ বসন্তে নাগলিঙ্গমের ফুল ফোটা শুরু হয়। দীর্ঘসময়ের পথ পরিক্রমায় পুরো গ্রীস্মকাল পেরিয়ে বর্ষা ছুঁই ছ্ুঁই করে তবেই এর বিদায়।
ইংরেজীতে ক্যানন বল নামে পরিচিত নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস মধ্য আমেরিকাতে। আমাদের দেশে মীরপুর জাতীয় উদ্যান, রমনা উদ্যান, বলধা উদ্যান, কার্জন হল, নটরডেম কলেজ প্রাঙ্গন , শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন, সিলেট-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজারের চা বাগানে এ গাছের উপস্থিতি আছে। আর আছে গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, যশোরসহ কয়েকটি স্থানে। নাটোরের উত্তরা গণভবনে পাশাপাশি দু’টো নাগলিঙ্গম গাছের উপস্থিতি থাকলেও বেশ কয়েক বছর আগে ঝড়ে উপড়ে গেছে একটি। সেই থেকে সাথীহারা একটি মাত্র গাছ রুপে রসে গন্ধে মোহনীয় হয়ে আছে।
নাটোরের উত্তরা গণভবন সারাদেশের দর্শনার্থীদের কাছে আদরনীয়। আভিজাত্যময় অপরুপ রাজপ্রাসাদ আর এর সংগ্রহশালা। তবে প্রতিষ্ঠাতা সৌখিন রাজা দয়ারাম রায় ছিলেন পুষ্প প্রেমিক। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য ফুলের গাছ সংগ্রহ করে রাজপ্রাসাদকে নান্দনিকতার শীর্ষে নিয়ে গেছেন। জানা যায়, রাজার প্রিয় ফুলের তালিকায় থাকা ফুলের মধ্যে নাগলিঙ্গম অন্যতম।
গ্রীস্মের তাপদাহে জনজীবন এখন বিপর্যস্ত। রুক্ষ হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। এ সময়ে দু’দন্ড শান্তির পরশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন নাগলিঙ্গম ফুলের গাছ। বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনস্ অথরিটি (বেপজা) এর কাউন্সিলর কাম ইন্সপেক্টর দিলারা শারমিন নাগলিঙ্গম ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তিনি বলেন,‘এ প্রথম দেখলাম নাগলিঙ্গম ফুল। রুপে আর গন্ধে এ ফুল অনন্য’। ‘গাছ থেকে নাগলিঙ্গম ফুলের ঝরে পড়া অসাধারণ’ বললেন কলেজ শিক্ষক মাসুমা সুলতানা।
নাটোরের জেলা প্রশাসক ও উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, উত্তরা গণভবনে থাকা দুূর্লভ গাছগুলো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে। এসব গাছের সংরক্ষণ এবং সংখ্যা বাড়ানোর জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।