লেজখেকো এবং আমাদের থেমে থাকা
কাকন রেজা, সাংবাদিক ও কলাম লেখক
বিপ্লব কেন সফল হয় না, কিংবা রেনেসাঁ কেন হয় না? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে জটিল কোনো প্রবন্ধের প্রয়োজন পড়ে না। এসব হয় না, লেজখেকোদের জন্য। কিছু সাপ বদঅভ্যাসে নিজের লেজ খেতে শুরু করে। এখানে বিপ্লব বা রেনেসাঁ হয় না এমন লেজখেকোদের জন্যই।
সংস্কৃতির কথা বলি। আপনি কখন সংস্কৃতির চর্চা করতে পারবেন, যুদ্ধের মধ্যে তো পারবেন না। পারবেন না সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতায়। সংস্কৃতি চর্চার জন্য প্রয়োজন একটি মোটামুটি স্থিতিশীল পরিবেশ। আগে প্রয়োজন অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা। এরপর অন্যকিছু। যতক্ষণ পর্যন্ত এসব নিশ্চিত করা না যাচ্ছে ততক্ষণ সংস্কৃতি চর্চার বাহাসের রাশ টেনে ধরা উচিত। কেউ যদি মনে করেন এরমধ্যেও বাহাস করেবেন কিংবা করে শক্তির জোরে সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করবেন তিনি লেজখেকো।
বুদ্ধিবৃত্তিক আলাপ বলুন, সুস্থ বিতর্ক বলুন সবকিছুর জন্যই একটি স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। যেখানে বিতর্ক করলে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে না। জুলুমের শিকার অর্থাৎ মজলুম হতে হয় না। এমনকি ধর্মের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন স্থিতিশীল পরিবেশের।
যতক্ষণ এমন পরিবেশ আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন না, ততক্ষণ আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক অর্থহীন। আপনার চিন্তার কার্যকারিতা প্রমাণ অসম্ভব। আপনার সঠিক চিন্তাও শক্তির জোরে বেঠিক হয়ে যেতে পারে। আপনি খোদ আক্রান্ত হতে পারেন। উদাহরণ অসংখ্য রয়েছে। সুতরাং শান্ত হোন, নিজের লেজ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কেন বিরত থাকতে বলছি। বিপ্লব হোক বা রেনেসাঁ তারজন্য একটা মিনিমাম সমঝোতা লাগে। যে সমঝোতা জরুরি একটা স্থিতিশীল রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। একই চিন্তার ভিন্ন ধারা রয়েছে। শাখা উপশাখা রয়েছে। বস্তুবাদ কিংবা ভাববাদের নানান ধারা উপধারা রয়েছে। কিন্তু যদি মূল বিষয়টাকে অর্থাৎ বস্তুবাদ বা ভাববাদকেই সমঝোতার লক্ষ্য স্থির করে কাজ করা যায়, তাহলেই স্থিতিশীলতা সম্ভব। লেজখেকোদের কি আরো বুঝিয়ে বলতে হবে?
লেজখেকোদের জন্যই আজকে এই অবস্থা। তারা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেন। ফলে গাড়ি কিংবা ঘোড়া কোনটাই চলমান হয় না। সব থেমে থাকে।