বিদ্যুৎ বিল কেন বেশি আসে!

বিদ্যুৎ বিল কেন বেশি আসে!

পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বিদ্যুৎ বিলের হিসাবঃ ২+২+৩= ১০। এই হিসাব দেখে সবাই হয়তো বলবেন হিসাব টি যোগ করতে ভুল করেছে। কিন্তু না পল্লী বিদ্যুৎ অফিস এভাবেই হিসাব করে বিদ্যুৎ বিল করে গ্রাহকদের পকেট কেটে আসতেছে। এবার একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি। একটি রেস্টুরেন্টে লিখা আছে প্রতি প্লেট ভাতের দাম ১০ টাকা কিন্তু শর্ত হলো কেও যদি একসঙ্গে ২ প্লেটের অধিক ভাত খান তাহলে প্রতি প্লেটের দাম রাখা হবে ১৫ টাকা। এবার একজন কাস্টমার যদি সকালে ২ প্লেট, দুপুরে ২ প্লেট এবং রাতে ২ প্লেট ভাত খায় তাহলে নিয়ম অনুযায়ী সেই কাস্টমারের ভাতের বিল হওয়ার কথা ( সকালে ২x১০= ২০ টাকা, দুপুরে ২x১০=২০ টাকা, রাতে ২x ১০= ২০ টাকা ) = ৬০ টাকা। কিন্তু হোটেল মালিক ইচ্ছে করলে সেই ৬ প্লেট ভাতের দামই ৭৫ টাকা, ৮০ টাকা, ৯০ টাকাও করতে পারবে। যদি মোট ভাতের প্লেটের সংখ্যা ঠিক রেখে সকাল, দুপুর, রাতে কমিয়ে বাড়িয়ে অনিয়মিত করে। এবার একটু ব্যাখ্যা করে বলছি। বাস্তবে কাস্টমার সকালে ২ প্লেট , দুপুরে ২ প্লেট এবং রাতে ২ প্লেট ভাত খেলেও হোটেল মালিক কাস্টমারের পকেট কাটার উদ্যেশ্যে খাতায় লিখে রেখেছে সকালে ১ প্লেট ( ১ প্লেট x ১০= ১০ টাকা) , দুপুরে ১ প্লেট (১ প্লেট x ১০ = ১০ টাকা) এবং রাতে ৪ প্লেট ( ৪ প্লেট x ১৫ টাকা = ৬০ টাকা)। এবার শর্ত অনুযায়ী ৬ প্লেট ভাতের দাম হবে ৮০ টাকা। অর্থাৎ ভাতের প্লেটের সংখ্যা ৬ টিই আছে। শুধুমাত্র সকাল, দুপুর এবং রাতে ভাতের প্লেটের সংখ্যা অনিয়মিত করে ৬ প্লেট ভাতের দাম ৮০ টাকা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ অফিস ও যদি গ্রাহকদের মোট বিদ্যুৎ ইউনিট ঠিক রেখে মাস অনুযায়ী (এক মাসে মিটারে যে রিডিং আসে সেখান থেকে কমিয়ে বা পরের মাসে বাড়িয়ে) অনিয়মিত করে সেক্ষেত্রেও ভাতের প্লেটের মতো বাড়তি বিল আসবে। ( প্রথমে কয়েক মাস মিটারের রিডিং থেকে কম ইউনিট লিখে তারপরের মাসে বেশি ইউনিট লিখে)। পল্লী বিদ্যুৎ বিলের হিসাবেও ধাপ অনুযায়ী ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিল কম বেশি আছে যা অনেক টা ভাতের প্লেটের মতো শর্ত। ( এই শর্ত গ্রাহকদের সুবিধার্থেই করা হয়েছে, কেননা প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহক কম পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে বলেই তার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন হার প্রযোজ্য হবে)। পল্লী বিদ্যুতের কোন আবাসিক গ্রাহক ০ থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে তাকে লাইফলাইন ধাপে অর্থাৎ ইউনিট প্রতি প্রাইজ ৪.৬৩ টাকা হারে দিতে হয়। ৫০ ইউনিটের অধিক ব্যবহার করলে ইউনিট প্রতি প্রাইজ ৫.২৬ টাকা, হারে ৭৫ ইউনিটের অধিক ব্যবহার করলে ইউনিট প্রতি প্রাইজ ৭.২০ টাকা হারে এভাবে ধাপ অনুযায়ী বাড়িয়ে সর্বশেষ ধাপ ৬০০ ইউনিটের অধিক ব্যবহার করলে ইউনিট প্রতি প্রাইজ ১৪.৬১ টাকা দিতে হয়। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস যদি প্রতিমাসেই প্রত্যেক গ্রাহকের মিটার সরেজমিনে স্বশরীরে গিয়ে চেক করে বিদ্যুৎ বিল হিসাব করে এবং বিলের কাগজ সরবরাহ করে তাতে কোন গ্রাহকের আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ অফিস অনেক সময়ই জনবলের অভাবের দোহাই দিয়ে সরেজমিনে না গিয়ে গ্রাহকদের মিটার চেক না করেই অফিসে বসেই আনুমানিক মনগড়া ইউনিট বসিয়ে বিদ্যুৎ বিল হিসাব করে, আর তখনই গ্রাহকেরা আর্থিক ভাবে বিরাট ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হয়। এখন কোন গ্রাহক জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে গড়ে যদি ৫০ ইউনিট করে মোট ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের হিসাব অনুযায়ী গ্রাহকের মোট ৩০০ ইউনিট বিদ্যুতের বিল আসবে ( জানুয়ারি ৫০ ইউনিট x ৪.৬৩= ২৩২ টাকা, ফেব্রুয়ারী ৫০ ইউনিট x ৪.৬৩= ২৩২ টাকা, মার্চ ৫০ ইউনিট x ৪.৬৩= ২৩২ টাকা, এপ্রিল ৫০ ইউনিট x ৪.৬৩= ২৩২ টাকা, মে ৫০ ইউনিট x ৪.৬৩= ২৩২ টাকা, জুন ৫০ ইউনিট x ৪.৬৩= ২৩২ টাকা।) অর্থাৎ ৬ মাসের মোট ৩০০ ইউনিটের বিল হবে ২৩২+২৩২+২৩২+২৩২+২৩২+২৩২ = ১৩৯২ টাকা। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বিল প্রস্তুতকারীগন অনেক সময় সরেজমিনের মিটারের তথ্য না দেখে যদি আনুমানিক জানুয়ারি মাসে ১০ ইউনিট, ফেব্রুয়ারীতে ১৫ ইউনিট, মার্চে ২০ ইউনিট, এপ্রিলে ২৫ ইউনিট, মে মাসে ২০ ইউনিট, এবং জুন মাসে ২১০ ইউনিট বসিয়ে বেলেন্স করে বিদ্যুৎ বিল হিসাব করেন তাহলে বিদ্যুৎ বিলের টাকা আগের সিস্টেম থেকে নিশ্চয়ই অনেক বেশি হবে । এক্ষেত্রে গ্রাহকের প্রথম ৫ মাসের (জানুয়ারি মাসে ১০ ইউনিট x ৪.৬৩ = ৪৬.৩ টাকা + ফেব্রুয়ারী মাসে ১৫ ইউনিট x ৪.৬৩ = ৬৯.৪৫ টাকা + মার্চে ২০ ইউনিট x ৪.৬৩ = ৯২.৬ টাকা + এপ্রিলে ২৫ ইউনিট x ৪.৬৩ = ১১৫.৭৫ টাকা +মে তে ২০ ইউনিট x ৪.৬৩ = ৯২.৬ টাকা) = ৪১৭ টাকা। এই ৫ মাসের বিদ্যুৎ বিল তুলনামূলক কম আসায় অনেক গ্রাহক হয়তো আত্ব তৃপ্তিতে ভোগতে থাকবে। কিন্তু যখন পরবর্তী জুন মাসের ২১০ ইউনিটের বিদ্যুৎ বিল হিসাব করবে ( প্রথম ৭৫ ইউনিট x ৫.২৬ = ৩৯৫ টাকা + দ্বিতীয় ১২৫ ইউনিট x ৭.২০= ৯০০ টাকা + তৃতীয় ১০ ইউনিট x ৮.০২ = ৮০.২০ টাকা) =১৩৭৫ টাকা তখন সে বিচলিত হবে । অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসের ঐ একই পরিমান ৩০০ ইউনিটের মোট বিদ্যুৎ বিল আসবে ( প্রথম ৫ মাসের বিল ৪১৭ টাকা + এবং জুন মাসের বিল ১৩৭৫ টাকা ) = মোট ১৭৯২ টাকা। ওই একই পরিমান বিদ্যুৎ ৩০০ ইউনিটের মাস অনুযায়ী অনিয়মিত রিডিং নেওয়ার কারণে গ্রাহকের দেওয়া লাগবে অতিরিক্ত ( ১৭৯২-১৩৯২) = ৪০০ টাকা। যা শুধু মিটারের সিস্টেমের জন্য। পল্লী বিদ্যুতের পোস্ট পেইড মিটার গুলিতে কোন মাসে কত রিডিং ( ইউনিট) আসছে সেটা মাস অনুযায়ী নির্দিষ্ট তারিখে রেকর্ড না রাখলে( গ্রাহকদের পক্ষে সম্ভব না) পরবর্তীতে কোন মাসে কত রিডিং ছিলো সেটা খুজে বের করার সুযোগ নেই। বিদ্যুতের মিটার গুলিতে মোট রিডিং ( বিদ্যুৎ ইউনিট) বাড়ানোর সুযোগ নেই কিন্তু এক মাসে কম দেখিয়ে অন্য মাসে বাড়িয়ে দেখানোর সুযোগ আছে। আর সেজন্যই গ্রাহকদের বাড়তি বিল গুনতে হয়। আর মাস অনুযায়ী বিদ্যুৎ ইউনিট যতবেশি কমানো বা বাড়ানো হবে গ্রাহক ততবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আর এটাই হয়ে আসছে। পোস্ট পেইড মিটার গুলিতে যদি বিগত ১২ মাসের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ইউনিটের রেকর্ড বের করার সিস্টেম থাকতো তাহলে গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিল দেওয়ার প্রয়োজন হতো না।

 

লেখক: প্রকৌশলী এম মোকাদ্দেছ বিল্লাহ (কাওছার)
এম ৪০৫৫৭, আই ই বি, ঢাকা।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend